ব্যবসা বাণিজ্য

চালের দাম ঊর্ধ্বমুখী, ভোক্তাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ

চালের দাম ঊর্ধ্বমুখী, ভোক্তাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ

উচ্চ মূল্যস্ফীতির লাগাম কিছুটা টানা গেলেও রাজধানীসহ সারাদেশে চালের বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে মিনিকেট চালের দাম এক লাফে কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে, যা নতুন করে মূল্যস্ফীতির ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।

মিনিকেট চালের দাম বৃদ্ধি

রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ও জেলা পর্যায়ের পাইকারি মোকামে অনুসন্ধানে জানা গেছে, দুই সপ্তাহ আগেও মিনিকেট চাল প্রতি কেজি ৮৫ টাকায় বিক্রি হলেও এখন তা ৯২ থেকে ৯৫ টাকায় পৌঁছেছে। পাইকারি পর্যায়ে ৫০ কেজির বস্তায় দাম বেড়েছে ৫১০ থেকে ৫২০ টাকা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, মিল পর্যায়ে মিনিকেট চালের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে।

বাড্ডার পিরোজপুর রাইস এজেন্সির ম্যানেজার শাহ আলম জানান, ‘রমজান শুরুর সময় মোজাম্মেল মিনিকেট চালের বস্তার দাম ছিল ৪১২০ থেকে ৪১৩০ টাকা, যা এখন বেড়ে ৪৬৪০ টাকা হয়েছে।’

চালের দাম বৃদ্ধির কারণ

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মিনিকেট চালের ধানের সংকট ও উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধিই এই দাম বৃদ্ধির মূল কারণ। মিলারদের দাবি, বৈশাখ মাসে মিনিকেট চালের ধানের উৎপাদন শেষ পর্যায়ে থাকায় বাজারে সরবরাহ কমে গেছে। ফলে মিল পর্যায়ে চাহিদামতো ধান না পাওয়ায় দাম বেড়ে গেছে। তবে এক মাস পর নতুন ফসল আসলে দাম কিছুটা কমতে পারে।

বাবুবাজার পাইকারি চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘দেশের বাজারে মিনিকেট চালের ধান কম থাকায় দাম বেড়েছে। তবে অন্যান্য চালের দাম স্বাভাবিক আছে।’

নওগাঁ ও কুষ্টিয়ায় চালের বাজার পরিস্থিতি

ধানসমৃদ্ধ জেলা নওগাঁয় দুই দিনের ব্যবধানে মিনিকেট চালের দাম কেজিতে চার টাকা বেড়েছে। ৫০ কেজির প্রতি বস্তার দাম প্রায় ২০০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। ব্যবসায়ীরা জানান, দেশীয় উৎপাদিত চিকন চালের দামই শুধু বেড়েছে, আমদানি করা চালের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

অন্যদিকে, কুষ্টিয়ার খাজানগর মোকামে গত ১৫ দিনে পাঁচবার ধানের দাম বেড়েছে। এতে খুচরা বাজারে মিনিকেট চাল ৭৮-৭৯ টাকা থেকে বেড়ে ৮৪-৮৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, ধানের দাম না কমলে চালের দামও সহনীয় হবে না।

অন্যান্য পণ্যের বাজার পরিস্থিতি

রমজানে অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার তুলনামূলক স্বস্তির মধ্যে রয়েছে। টমেটো, আলু, পেঁয়াজসহ সবজির দাম নিয়ন্ত্রিত রয়েছে। দেশি পেঁয়াজ ৩৫ থেকে ৫০ টাকা, ছোলা ১০০ থেকে ১১০ টাকা, চিনি ১২০ টাকা, আলু ২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। মুরগির দামও কিছুটা কমেছে, সোনালি মুরগি কেজি ২৬০ থেকে ২৮০ টাকায় এবং ব্রয়লার মুরগি ১৯০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।

সরকারি উদ্যোগ প্রয়োজন

চালের বাজার স্বাভাবিক রাখতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজনীয়তার কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা। জেলা খাদ্য কর্মকর্তা ওয়াজিউর রহমান জানান, ‘যদি কেউ অযৌক্তিকভাবে চালের দাম বাড়ায়, তবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মিলারদের ধান ও চাল মজুদের বিষয়ে তদন্ত চলছে।’

চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের জন্য আরও সংকট তৈরি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button