সারা দেশে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’-এ ১,৩০৮ জন গ্রেপ্তার

সারা দেশে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’-এ ১,৩০৮ জন গ্রেপ্তার
ঢাকা: সন্ত্রাস দমন ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে যৌথ বাহিনী পরিচালিত ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’-এর প্রথম দিনে সারা দেশে মোট ১,৩০৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে বেশিরভাগই ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, এছাড়া তালিকায় রয়েছে চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজরা।
গ্রেপ্তার অভিযান ও পরিস্থিতি
গত শনিবার রাত থেকে রবিবার দুপুর পর্যন্ত চলা এই বিশেষ অভিযানে বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে দেশীয় অস্ত্রসহ আগ্নেয়াস্ত্র।
গাজীপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার ওপর হামলার ঘটনায় এই অভিযান শুরু হয় বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব নাসিমুল গনি। তিনি বলেন, “যারা দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজন হলে অভিযান চলতে থাকবে।”
গাজীপুরে গ্রেপ্তার আতঙ্ক
অভিযানের মূল কেন্দ্রবিন্দু গাজীপুরে এখন গ্রেপ্তার আতঙ্ক বিরাজ করছে। সেখান থেকে ৬৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যার মধ্যে ৩৪ জন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী। সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের ভাতিজা আমজাদ মোল্লা ও তার স্ত্রীও গ্রেপ্তার হয়েছেন। তাদের প্রত্যেককে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গ্রেপ্তার আতঙ্কে অনেকেই ঘরে তালা দিয়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছেন।
অভিযানের পরিসংখ্যান
পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি ইনামুল হক সাগর জানিয়েছেন, শনিবার বিকাল থেকে রবিবার দুপুর পর্যন্ত অভিযান পরিচালিত হয়।
- মেট্রোপলিটন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার: ২৭৪ জন
- জেলা পর্যায়ে গ্রেপ্তার: ১,০৩৪ জন
- গাজীপুর থেকে গ্রেপ্তার: ৬৫ জন
- রাজশাহীতে: ৪ জন
- নোয়াখালীতে: ১১ জন
- রাজবাড়ীতে: ৩ জন
- রাঙামাটিতে: ৩ জন
- শেরপুরে: ১০ জন
গাজীপুরে অস্ত্রের সরবরাহ
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার ড. নাজমুল করিম খান জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগ প্রচুর পরিমাণে অস্ত্র ঢুকিয়েছে। তিনি বলেন, “গাজীপুরকে অশান্ত করতে পরিকল্পিতভাবে অস্ত্র সরবরাহ করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর অবস্থানে রয়েছে।”
সরকারের বক্তব্য
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, “যতদিন প্রয়োজন, ততদিন অপারেশন ডেভিল হান্ট চলবে। যারা দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করবে, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।”
এদিকে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব নাসিমুল গনি জানান, “আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অভিযানের মাধ্যমে অপরাধীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে।”
দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ‘কমান্ড সেন্টার’ চালু করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
সংকটের গভীরতা
এলাকাবাসীর ভাষ্যমতে, গাজীপুরের দাখিন খান ও হায়দারাবাদ এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। গ্রেপ্তার এড়াতে অনেক পরিবার এলাকা ছেড়েছে।
এই অভিযান কতদিন চলবে এবং এর ফলাফল কী হবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হয়েছে—দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে দেওয়া হবে না।