বাংলাদেশে ইউএসএআইডির তহবিল স্থগিত: ১০ হাজার কর্মী বেকার, ঝুঁকিতে উন্নয়ন কার্যক্রম

বাংলাদেশে ইউএসএআইডির তহবিল স্থগিত: ১০ হাজার কর্মী বেকার, ঝুঁকিতে উন্নয়ন কার্যক্রম
ঢাকা, ৬ ফেব্রুয়ারি: সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও সহযোগিতা কার্যক্রম স্থগিত করেছে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিষয়ক সংস্থা ইউএসএআইডি। গত ২৫ জানুয়ারি দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে এসংক্রান্ত চিঠি পাঠানো হয়। এর আগে, ২১ জানুয়ারি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ বিষয়ে একটি নির্বাহী আদেশ জারি করেন। এরপর বাংলাদেশে রোহিঙ্গা সহায়তা ছাড়া ইউএসএআইডির বাকি সব কার্যক্রম আপাতত তিন মাসের জন্য স্থগিত করা হয়েছে।
এর ফলে দেশের ৩২৭টি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার (এনজিও) প্রায় ১০ হাজার কর্মী বেকার হয়ে পড়েছেন। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পরিবেশসহ একাধিক সহায়তা কার্যক্রম এখন ঝুঁকির মুখে রয়েছে।
এনজিও খাতের বিপর্যয়
এনজিওবিষয়ক ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ২৭৪টি এনজিও বিভিন্ন দেশ থেকে তহবিল পেয়ে থাকে, যার মধ্যে ৮৭টি এনজিও ইউএসএআইডির অর্থায়নে পরিচালিত হতো। এই ফান্ডের স্থগিতাদেশের ফলে প্রায় ২৪০টি এনজিওর প্রকল্প বন্ধ হয়ে গেছে। এতে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন হাজারো কর্মী।
এনজিওবিষয়ক ব্যুরোর মহাপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, “৮৭টি ডোনার এজেন্সি ইউএসএআইডির ফান্ড পেত। তারা বিভিন্ন স্থানীয় এনজিওর মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করত। আপাতত তিন মাসের জন্য ফান্ড স্থগিত করা হয়েছে, যা উন্নয়ন কার্যক্রম ও কর্মসংস্থানের ওপর বড় প্রভাব ফেলবে।”
কর্মসংস্থান সংকট ও মানবিক সহায়তার বিপর্যয়
ফান্ড স্থগিতের ফলে এনজিওগুলোর ১০ হাজারের বেশি কর্মী চাকরি হারিয়েছেন। বেশিরভাগ কর্মী চুক্তিভিত্তিক হওয়ায় তারা কোনো আর্থিক সুবিধা পাচ্ছেন না। ফলে অনেক পরিবার চরম আর্থিক সংকটে পড়েছে। অন্যদিকে, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, কৃষি, খাদ্য নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও শাসনব্যবস্থা, পরিবেশ, জ্বালানি এবং মানবিক সহায়তা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “ইউএসএআইডির ফান্ড বন্ধের ফলে উন্নয়ন কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হচ্ছে, যা শুধুমাত্র বাংলাদেশেই নয়, সারা বিশ্বেই হচ্ছে। তবে বাংলাদেশের ওপর এর প্রভাব বেশি পড়বে।”
আইসিডিডিআরবির গবেষণা সংকট
আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) ইউএসএআইডির অর্থায়নে পরিচালিত বিভিন্ন গবেষণা কার্যক্রম স্থগিত করেছে। ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠানটি এক হাজারের বেশি কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চাকরিচ্যুতির চিঠি দিয়েছে। স্থায়ী কর্মীদের তিন মাসের নোটিশ দেওয়া হলেও অস্থায়ী কর্মীদের তাৎক্ষণিক অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
আইসিডিডিআরবির কমিউনিকেশনস বিভাগের সিনিয়র ম্যানেজার এ কে এম তারিফুল ইসলাম খান বলেন, “আমরা যুক্তরাষ্ট্র সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী তাদের অর্থায়নে পরিচালিত প্রকল্প ও গবেষণাগুলো আপাতত স্থগিত রেখেছি। তবে আমরা আশাবাদী, পুনরায় কার্যক্রম শুরু করতে পারব।”
ব্র্যাকসহ অন্যান্য সংস্থার কার্যক্রম স্থগিত
বাংলাদেশভিত্তিক বৃহত্তম বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকসহ চারটি দেশের ৯টি কর্মসূচি স্থগিত করেছে ইউএসএআইডি। এ ছাড়া, সুশীলন, ইউথ রাইজসহ অন্যান্য এনজিওর বিভিন্ন প্রকল্পও বন্ধ হয়ে গেছে।
বিশ্বব্যাপী উন্নয়ন সহায়তা সংকট
শুধু যুক্তরাষ্ট্রই নয়, সুইজারল্যান্ড সরকারও বাংলাদেশসহ তিনটি দেশে উন্নয়ন সহায়তা বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সুইস সরকার ২০২৮ সালের পর বাংলাদেশ, আলবেনিয়া ও জাম্বিয়ায় দ্বিপক্ষীয় উন্নয়ন কর্মসূচি বন্ধ করবে বলে জানিয়েছে।
ফান্ড বন্ধের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব
ইউএসএআইডির ফান্ড বন্ধের ফলে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে বড় প্রভাব পড়বে। বিশেষ করে এইচআইভি, ম্যালেরিয়া ও যক্ষ্মা রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি ঝুঁকির মুখে পড়বে। এছাড়া, পরিবেশ, জ্বালানি ও কৃষি প্রকল্পগুলোর কার্যক্রমও স্থবির হয়ে পড়েছে।