সারাদেশ

ঝিনাইদহে চরমপন্থীদের গুলিতে তিনজন নিহত, এলাকাজুড়ে আতঙ্ক

ঝিনাইদহে চরমপন্থীদের গুলিতে তিনজন নিহত, এলাকাজুড়ে আতঙ্ক

ঝিনাইদহে ফের চরমপন্থীদের তৎপরতা বেড়েছে। জেলার শৈলকুপা উপজেলার রামচন্দ্রপুর এলাকায় শুক্রবার রাতে চরমপন্থী গ্রুপগুলোর আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে এক শীর্ষ চরমপন্থী নেতাসহ তিনজনকে। এ ঘটনার দায় স্বীকার করে হোয়াটসঅ্যাপে খুদে বার্তা পাঠিয়েছে জাসদ গণবাহিনীর সামরিক প্রধান কালু।

নিহতদের পরিচয়
নিহতরা হলেন—হরিণাকুণ্ডু উপজেলার আহাদনগর গ্রামের পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টি জনযুদ্ধের অন্যতম শীর্ষ নেতা হানিফ আলী ওরফে হানেফ (৫৬), তাঁর শ্যালক লিটন হোসেন (৩৮) ও কুষ্টিয়া সদর উপজেলার পিয়ারপুর গ্রামের রাইসুল ইসলাম রাজু (২৮)। তিনজনের মাথা ও বুকে গুলির চিহ্ন রয়েছে। জানা গেছে, হানিফের বিরুদ্ধে ১৪টি হত্যা মামলাসহ অসংখ্য মামলা ছিল এবং তিনি ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত ছিলেন। তবে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের বিশেষ ক্ষমায় জামিনে মুক্ত ছিলেন তিনি।

বিরোধের কারণ
সূত্র জানায়, চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গার কায়েতপাড়া বাঁওড় দখলকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। কোটি টাকার বেশি মূল্যের মাছ থাকা এই বাঁওড়টি দখলে নিতে হানিফ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছিলেন। এক বছর আগে তিনি সেখানে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করলে বিবদমান গ্রুপগুলোর মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। এরই জেরে শুক্রবার রাতে তাঁকে ও তাঁর দুই সহযোগীকে গুলি করে হত্যা করা হয়।

চরমপন্থীদের বার্তা
হত্যাকাণ্ডের পরপরই জাসদ গণবাহিনীর সামরিক প্রধান কালু হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠিয়ে হত্যার দায় স্বীকার করেন। বার্তায় বলা হয়, ‘সন্ধ্যায় রামচন্দ্রপুর খালের মধ্যে তিনজনকে হত্যা করে লাশ ফেলে রাখা হয়েছে।’

সন্ত্রাসী কার্যক্রমের ইতিহাস
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, নব্বইয়ের দশকে ঝিনাইদহ ও আশপাশের এলাকায় চরমপন্থী নেতা হানিফ ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিলেন। তিনি কুলবাড়িয়ার আব্দুর রহমান, তিওরবিলার লুত্ফর রহমানসহ শতাধিক মানুষকে হত্যা করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। একসময় তিনি ইজাল মাস্টার নামে এক ব্যক্তির মাথা কেটে তা দিয়ে ফুটবল খেলেছিলেন, যা দেশজুড়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছিল।

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অবস্থান
ঝিনাইদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইমরান জাকারিয়া জানান, হানিফের বিরুদ্ধে একাধিক হত্যা, অপহরণ, অস্ত্র ও চাঁদাবাজির মামলা রয়েছে। তাঁর ফাঁসির রায় বহাল থাকলেও রাষ্ট্রপতির ক্ষমায় তিনি মুক্তি পান। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িতদের ধরতে পুলিশ অভিযান শুরু করেছে।

চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কনক কুমার দাস জানান, তাঁরা এ ঘটনায় সতর্ক অবস্থানে আছেন, যদিও চুয়াডাঙ্গায় এখনো কোনো আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেনি।

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
জেলা বিএনপির সহসভাপতি এনামুল কবির মুকুল বলেন, ‘চরমপন্থীরা হঠাৎ করেই আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছে। যদি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী দ্রুত ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে এই অঞ্চল আবারও অশান্ত হয়ে উঠবে।’

এদিকে, বামপন্থী দলগুলোর নেতারা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, এই হত্যাকাণ্ড চরমপন্থীদের মধ্যে নতুন করে সংঘাত উসকে দিতে পারে। তারা দ্রুত প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ দাবি করেছেন।

এই হত্যাকাণ্ডের ফলে ঝিনাইদহসহ আশপাশের এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। সাধারণ মানুষ আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির জন্য প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপের অপেক্ষায় রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button