কুয়েটে ছাত্রদলের ফরম বিতরণকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, আহত শতাধিক

কুয়েটে ছাত্রদলের ফরম বিতরণকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, আহত শতাধিক
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) ছাত্রদলের ফরম বিতরণকে কেন্দ্র করে ‘সাধারণ শিক্ষার্থীদের’ সঙ্গে ছাত্রদলের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। এতে উভয়পক্ষের শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।
মঙ্গলবার দুপুরে ক্যাম্পাসে এ সংঘর্ষ শুরু হয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মোতায়েন করা হয়।
কীভাবে সংঘর্ষ শুরু হয়?
প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, কয়েক দিন ধরে কুয়েট শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ম্যাসেঞ্জার গ্রুপে ছাত্রদলের কমিটি গঠন ও ফরম বিতরণ নিয়ে আলোচনা চলছিল। সোমবার ছাত্রদল ক্যাম্পাসে লিফলেট বিতরণ করলে উত্তেজনা আরও বাড়ে। মঙ্গলবার সকালে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিতে শিক্ষার্থীরা মিছিল বের করলে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়।
সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে উপাচার্যের কার্যালয় ঘেরাও করতে গেলে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। একপর্যায়ে দুপুরের দিকে সংঘর্ষ বাধে এবং বহিরাগতদের ক্যাম্পাসে প্রবেশের অভিযোগ ওঠে।
আহতদের অবস্থা
সংঘর্ষে আহতদের মধ্যে অনেকে কুয়েট স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ও স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছয়জনের পরিচয় পাওয়া গেছে— প্রীতম বিশ্বাস (২১), শাফি (২৩), নাফিস ফয়াদ (২২), সৌরভ (২৩), তাওহিদুল (২৪) ও মো. ইউসুফ খান সিয়াম (২২)।
স্থানীয় সূত্রের মতে, সংঘর্ষে বহিরাগতদের অংশগ্রহণের কারণে আহতের সংখ্যা শতাধিক ছাড়িয়ে যেতে পারে।
কুয়েট প্রশাসনের অবস্থান
সংঘর্ষের জেরে মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যকে কুয়েটের মেডিক্যাল সেন্টারে অবরুদ্ধ করে রাখেন।
কুয়েট প্রশাসন জানিয়েছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ক্যাম্পাসের বাইরে অবস্থান করছিলেন। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে প্রশাসন হিমশিম খাচ্ছে।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পদক্ষেপ
খুলনা মহানগর পুলিশের (কেএমপি) খানজাহান আলী থানার ওসি মো. কবির হোসেন বলেন, “ঘটনাস্থল থেকে পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, পুলিশ ও র্যাব কাজ করছে।”
বিএনপি ও ছাত্রদলের প্রতিক্রিয়া
খুলনা বিএনপির এক বিবৃতিতে ছাত্রদলের ওপর হামলার জন্য ছাত্রশিবিরকে দায়ী করা হয়। বিএনপির নেতারা দাবি করেন, ছাত্রশিবির পরিকল্পিতভাবে হামলা চালিয়ে ছাত্রদলের অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীকে আহত করেছে।
অন্যদিকে ছাত্রশিবির এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, কুয়েটের ঘটনার সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই।
কুয়েট শিক্ষার্থীদের দাবি
কুয়েট শিক্ষার্থীরা এক বিবৃতিতে বিশ্ববিদ্যালয়কে রাজনীতিমুক্ত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। তারা ঘটনার তদন্ত ও দোষীদের শাস্তির দাবি করেছেন।
বর্তমানে ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি থমথমে। সংঘর্ষের পর কুয়েটে সামরিক বাহিনীর অবস্থান রাখা এবং আহতদের চিকিৎসায় প্রশাসনের সহায়তা দেওয়ার দাবি উঠেছে।