সুইজারল্যান্ডের উন্নয়ন সহায়তা বন্ধ: বাংলাদেশের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ
সুইজারল্যান্ডের উন্নয়ন সহায়তা বন্ধ: বাংলাদেশের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ
২০২৬ থেকে ২০২৮ সালের আর্থিক পরিকল্পনা থেকে ৩২ কোটি ১০ লাখ সুইস ফ্রাঁ কাটছাঁটের সিদ্ধান্ত
ঢাকা, [তারিখ] – বাংলাদেশে উন্নয়ন সহায়তা কর্মসূচি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সুইজারল্যান্ড সরকার। এর আগে গত বছর ডিসেম্বরে বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধের চেয়ে বৈদেশিক সাহায্য বরাদ্দ কমিয়ে দিয়েছিল দেশটির সংসদ। এবার তা সম্পূর্ণ বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সুইস সংবাদমাধ্যম সুইস ইনফোর এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
সুইজারল্যান্ডের সংসদ ২০২৫ সালের আন্তর্জাতিক সহযোগিতার বাজেট থেকে ১১ কোটি সুইস ফ্রাঁ (প্রায় ১ হাজার ৪৬৮ কোটি টাকা) কমিয়ে দিয়েছে। এছাড়া ২০২৬ থেকে ২০২৮ সালের আর্থিক পরিকল্পনা থেকে ৩২ কোটি ১০ লাখ সুইস ফ্রাঁ (প্রায় ৪ হাজার ২৮৫ কোটি টাকা) কাটছাঁটের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের ফলে বাংলাদেশে সুইজারল্যান্ডের উন্নয়ন সহায়তা কর্মসূচি বন্ধ হয়ে যাবে।
বাংলাদেশ সুইস অর্থায়নের দিক দিয়ে শীর্ষ পর্যায়ের দেশ না হলেও মোটামুটি শীর্ষ ১৫টি দেশের একটি। সুইজারল্যান্ডের উন্নয়ন সহযোগিতার তালিকায় ২০২৩ সালে এশিয়ায় সর্বোচ্চ অর্থায়নে দখলকৃত ফিলিস্তিন অঞ্চল, সিরিয়া, মায়ানমার ও আফগানিস্তানের পরে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল। সে বছর বাংলাদেশে ৩৪১ লাখ সুইস ফ্রাঁ (প্রায় ৪৫৭ কোটি টাকা) বরাদ্দ ছিল। ২০২৩ সালের হিসাবে সুইস অর্থায়নের ১১২টি দেশের তালিকায় বাংলাদেশ ১১তম অবস্থানে ছিল।
সুইজারল্যান্ডের এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের জন্য সামনের দিনগুলোতে নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ূন কবির বলেন, “বাংলাদেশে শিক্ষা, দক্ষতা বৃদ্ধি, নারী উন্নয়নের মতো ক্ষেত্রে সুইস সহযোগিতা অনেকটা শর্তসাপেক্ষ ছাড়াই হয়ে থাকে। যদি এমন সহযোগিতা কমে যায়, তাহলে সেটা বাংলাদেশের জন্য চাপ বাড়াবে বা কিছুটা শূন্যতা তৈরি করবে।”
তিনি আরও বলেন, “আমেরিকায় ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর যেভাবে বিশ্বব্যাপী অর্থায়ন পুনর্বিবেচনার জন্য স্থগিত করেছেন, সে প্রেক্ষাপটে আস্তে আস্তে একটা প্রবণতা পরিষ্কার হচ্ছে। বৈদেশিক সাহায্যের ক্ষেত্রে আগে যে উদার ব্যবস্থা ছিল বা পশ্চিমা উন্নত বিশ্ব এটাকে নৈতিক মানদণ্ডের বিচারে দেখত, সেই জায়গা থেকে তারা সরে আসছে। এখন তারা নিজেদের প্রয়োজন ও ইউটিলিটি স্ট্যান্ডার্ডের ভিত্তিতে বিষয়গুলো বিবেচনা করছে।”
সুইজারল্যান্ডের এই সিদ্ধান্তের প্রভাব বাংলাদেশে ধীরে ধীরে ощущаться শুরু করেছে। আমেরিকার সিদ্ধান্তের পরপরই অনেক উন্নয়ন সংস্থা বাংলাদেশে প্রকল্প বন্ধ বা স্থগিত করেছে। অনেক ক্ষেত্রে প্রকল্পের পরিসর সীমিত করে আনা হয়েছে। সুইস সিদ্ধান্তেও ধীরে ধীরে এমন প্রভাব আরো বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
হুমায়ূন কবিরের মতে, বাংলাদেশের জন্য এখন একদিকে বর্তমান বাস্তবতায় অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগী দেশগুলোকে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় পাশে রাখার চেষ্টা করতে হবে। অন্যদিকে, অভ্যন্তরীণ সম্পদ ব্যবহারে আরো সাশ্রয়ী ও দক্ষ হওয়ার দিকেও নজর দিতে হবে।
সুইজারল্যান্ডের এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের উন্নয়ন কর্মসূচিতে কী ধরনের প্রভাব ফেলবে, তা নিয়ে এখনই স্পষ্ট ধারণা করা যাচ্ছে না। তবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বৈদেশিক সহায়তা কমে যাওয়ায় বাংলাদেশকে নিজস্ব সম্পদ ও কৌশলগত পরিকল্পনার মাধ্যমে এই শূন্যতা পূরণের চেষ্টা করতে হবে।
সূত্র: বিবিসি বাংলা।