জার্মানিতে অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে সিডিইউর প্রস্তাব পাস, বিক্ষোভে উত্তাল রাজনীতি

জার্মানিতে অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে সিডিইউর প্রস্তাব পাস, বিক্ষোভে উত্তাল রাজনীতি
বার্লিন, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫:
জার্মানির সংসদে অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে রক্ষণশীল দল সিডিইউর একটি প্রস্তাব পাস হয়েছে। ২৩ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশটির রাজনৈতিক অঙ্গনে অভিবাসন একটি বড় ইস্যু হয়ে উঠেছে। এমন প্রেক্ষাপটে বুধবার সংসদে প্রস্তাবটি পাস হয়।
সংসদে সিডিইউর আনা প্রস্তাবে অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে বেশ কিছু কঠোর পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সীমান্তে স্থায়ী নিয়ন্ত্রণ আরোপ, শেঙেন জোনে মুক্ত চলাচল বন্ধ করা, বৈধ কাগজপত্র ছাড়া জার্মানিতে প্রবেশকারীদের তাৎক্ষণিকভাবে প্রত্যাবাসন, আশ্রয় আবেদন বাতিল হওয়া ব্যক্তিদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো এবং অপরাধে জড়িত অভিবাসীদের বসবাসের অনুমতি সীমিতকরণ।
বুধবার সংসদে প্রস্তাবটির পক্ষে ৩৪৮টি এবং বিপক্ষে ৩৪৫টি ভোট পড়ে। ১০ জন সংসদ সদস্য ভোটদানে বিরত থাকেন। চ্যান্সেলর ওলাফ শোলজের এসপিডি ও গ্রিন পার্টির বিরোধিতা সত্ত্বেও কট্টর ডানপন্থী দল এএফডি ও এফডিপির সমর্থনে প্রস্তাবটি পাস হয়।
সাম্প্রতিক সময়ে জার্মানির বিভিন্ন শহরে হামলার ঘটনায় অভিবাসীদের জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। এসব ঘটনায় বেশ কয়েকজন নিহত হওয়ায় অভিবাসন ইস্যুটি নির্বাচনী রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। জনমত জরিপে সিডিইউ/সিএসইউ বর্তমানে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে।
বিক্ষোভ ও সমালোচনা:
প্রস্তাব পাসের পর সিডিইউ সদর দপ্তরের বাইরে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়। বৃহস্পতিবার হাজার হাজার মানুষ সিডিইউ সদর দপ্তরের সামনে সমবেত হয়ে বিক্ষোভ দেখান। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, সিডিইউ কট্টর ডানপন্থী দল এএফডির সঙ্গে হাত মিলিয়ে প্রস্তাব পাস করেছে। বিক্ষোভকারীদের দাবি, ১৩ হাজার মানুষ প্রতিবাদে অংশ নিয়েছে, তবে পুলিশ জানায়, সংখ্যাটি ছয় হাজার।
চ্যান্সেলর ওলাফ শোলজ, গ্রিন পার্টি এবং বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন প্রস্তাবটির তীব্র সমালোচনা করেছেন। তাদের বক্তব্য, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানির রাজনৈতিক দলগুলো অতি ডানপন্থীদের সঙ্গে সমন্বয় না করার যে সমঝোতা করেছিল, সিডিইউ তা ভেঙেছে।
‘ডাপন্থীবিরোধী জোট’ নামে একটি সংগঠন এই বিক্ষোভের ডাক দিয়েছিল। সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘এএফডির সঙ্গে কোনো সহযোগিতা নয়।’ সংগঠক ক্যারোলিন মোসার সিডিইউ নেতা ফ্রিডরিশ ম্যার্ৎসকে অভিযুক্ত করে বলেছেন, ‘তিনিই এএফডির অতি ডানপন্থাকে সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য করে তুলছেন।’
ম্যার্ৎসের জনসভায় বিক্ষোভ:
ড্রেসডেনে ফ্রিডরিশ ম্যার্ৎসের নির্বাচনী জনসভায়ও বিক্ষোভ হয়েছে। সেখানে কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী সমবেত হয়ে স্লোগান দেন, ‘ম্যার্ৎস হলেন গণতন্ত্রের বিপদের কারণ, তার লজ্জিত হওয়া উচিত।’
প্রস্তাবের প্রেক্ষাপট:
জার্মানিতে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অভিবাসন একটি বড় রাজনৈতিক ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০১৫ সালে শরণার্থী সংকটের পর থেকে অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হলেও তা পুরোপুরি কার্যকর হয়নি। এবারের প্রস্তাবটি নির্বাচনী প্রচারণার অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে, যা সিডিইউর জনপ্রিয়তা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
জার্মানির রাজনৈতিক অঙ্গনে অভিবাসন ইস্যুটি আগামী নির্বাচনে একটি বড় ফ্যাক্টর হয়ে উঠতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।