সাহিত্য সাংস্কৃতি

‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান: নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ’ প্রতিপাদ্যে শুরু হচ্ছে অমর একুশে বইমেলা ২০২৫

‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান: নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ’ প্রতিপাদ্যে শুরু হচ্ছে অমর একুশে বইমেলা ২০২৫

ঢাকা, ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫:
‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান: নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ’ প্রতিপাদ্যে আজ শনিবার থেকে শুরু হচ্ছে মাসব্যাপী অমর একুশে বইমেলা ২০২৫। বিকেল ৩টায় বইমেলার উদ্বোধন করবেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এবারের মেলায় অংশ নিচ্ছে সর্বোচ্চসংখ্যক ৭০৮টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান।

গতকাল শুক্রবার বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মেলা আয়োজনের প্রস্তুতি সরেজমিনে দেখা গেছে। প্রায় সব অবকাঠামো নির্মাণ শেষ হয়েছে। এখন স্টল ও প্যাভিলিয়নগুলোতে ঘষামাজা ও রঙের কাজ চলছে। এরপরই স্টলগুলোতে নতুন ও পুরনো বই সাজানো হবে। ইতিমধ্যে অনেক প্যাভিলিয়ন তাদের র্যাকে বই গুছিয়ে ফেলেছে।

বইমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্যসচিব ড. সরকার আমিন জানান, গতবারের মতো এবারও বইমেলার বিন্যাস অক্ষুণ্ন রাখা হয়েছে। তবে কিছু আঙ্গিকগত পরিবর্তন আনা হয়েছে। টিএসসি, দোয়েল চত্বর, এমআরটি বেসিং প্লান্ট এবং ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশন অংশে মোট চারটি প্রবেশ ও প্রস্থান পথ রাখা হয়েছে। খাবারের স্টলগুলো ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশনের সীমানা ঘেঁষে সুবিন্যস্ত করা হয়েছে।

নারী-পুরুষের জন্য পৃথক নামাজের স্থান, ওয়াশরুমসহ অন্যান্য পরিষেবা এবারও থাকছে। শিশুচত্বর মন্দির গেটের ডান দিকে বড় পরিসরে রাখা হয়েছে, যাতে শিশুরা অবাধে বিচরণ করতে পারে এবং তাদের কাঙ্ক্ষিত বই সহজে সংগ্রহ করতে পারে।

মেলার সময়সূচি:

  • আজ থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকবে বইমেলা।
  • রাত সাড়ে ৮টার পর নতুন করে কেউ মেলা প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতে পারবেন না।
  • ছুটির দিন মেলা সকাল ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলবে।
  • প্রতি শুক্র ও শনিবার (৮ ও ১৫ ফেব্রুয়ারি ছাড়া) সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ‘শিশুপ্রহর’ থাকবে।
  • ২১ ফেব্রুয়ারি মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে মেলা সকাল ৮টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলবে।

নিরাপত্তা ও অন্যান্য ব্যবস্থা:
ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী জানান, বইমেলায় যেন কোনো উসকানিমূলক বই না আসে, সে বিষয়ে বাংলা একাডেমিকে সতর্ক করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘প্রতিবছর কিছু লেখক বা প্রকাশনী উসকানিমূলক বই প্রকাশ করে। এবার যেন এমন কিছু না হয়, সে জন্য বই স্ক্যানিং করে মেলায় পাঠানোর অনুরোধ করা হয়েছে।’

এবারের মেলায় কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে, যেখানে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা তদারকি করা হবে। রমনা থানার ডিসি নিরাপত্তা তদারকি করবেন। এছাড়া র্যাব, সিটিটিসি ও অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার সহযোগিতায় মেলা এলাকা সিসিটিভি দ্বারা নিরাপত্তাবেষ্টনীর মধ্যে রাখা হয়েছে। ম্যানুয়ালি দেহতল্লাশি ও ডগ স্কোয়াডের মাধ্যমে মাদক ও বিস্ফোরক দ্রব্য প্রবেশ রোধ করা হবে।

ট্রাফিক ব্যবস্থার অংশ হিসেবে পুরো মাস টিএসসি থেকে দোয়েল চত্বরের ক্রসিংটি বন্ধ থাকবে। দর্শনার্থীরা দোয়েল চত্বর হয়ে তিন নেতার মাজারের সামনে পর্যন্ত আসতে পারবেন। ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ভারী যান চলাচল বন্ধ থাকবে।

ফুডকোর্টে অতিরিক্ত দাম নেওয়া রোধে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে নজরদারির মধ্যে রাখার আহ্বান জানিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার। তিনি বলেন, ‘বইমেলা যেন বাণিজ্যমেলার মতো না হয়। পাঁচ টাকার জিনিসের দাম ছয়-সাত টাকা হতে পারে, কিন্তু ১৫ টাকা নেওয়া অগ্রহণযোগ্য।’

এবারের বইমেলা ঘিরে লেখক, পাঠক ও প্রকাশকদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ দেখা গেছে। নতুন বই ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে মেলা জমজমাট হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button