সারাদেশ

পিলখানা হত্যাকাণ্ড: শহীদ পরিবারগুলোর ক্ষোভ ও ন্যায়বিচারের দাবি

পিলখানা হত্যাকাণ্ড: শহীদ পরিবারগুলোর ক্ষোভ ও ন্যায়বিচারের দাবি

২০০৯ সালের পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত হওয়া বিডিআর সদস্যদের জামিনে মুক্তি নিয়ে শহীদ সেনা পরিবারগুলো গভীর ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এই ঘটনায় নিহত কর্নেল মো. মুজিবুল হকের স্ত্রী নেহরীন ফেরদৌসী বলেন, “যারা আমার স্বামীসহ সেনা কর্মকর্তাদের পৈশাচিকভাবে হত্যা করেছে, তাদের মুক্তি আমাদের জন্য অসহনীয়।”

২০০৯ সালের ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় সংঘটিত বিডিআর বিদ্রোহে ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ মোট ৭৪ জন নিহত হন। নিহতদের অনেককে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে, গুলি করে হত্যা করা হয়। লাশ বিকৃত করে ড্রেনে ফেলে দেওয়া হয়, পুড়িয়ে ফেলা হয় এবং মাটিচাপা দেওয়া হয়। এ ঘটনায় শহীদ সেনা কর্মকর্তাদের পরিবারগুলোও চরম নির্যাতনের শিকার হয়।

নেহরীন ফেরদৌসী বলেন, “মুজিবুল হকের লাশ ড্রেনে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। ড্রেনে ভেসে সেই লাশ কামরাঙ্গীর চরে চলে যায়। লাশটি ছিল ক্ষতবিক্ষত। মাথার খুলি ভাঙা। একাধিক ক্ষত ছিল শরীরে। বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে এবং গুলি করে তিনতলা থেকে তাঁকে নিচে ফেলে দেওয়া হয়েছিল।”

গত কয়েক মাসে বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় বেশ কিছু আসামি জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। যদিও তাঁরা এখনো অভিযোগমুক্ত নন, তবে তাদের মুক্তি নিয়ে আনন্দ-উল্লাস শহীদ পরিবারগুলোর জন্য বেদনাদায়ক। নেহরীন ফেরদৌসী আরও বলেন, “আমরা নিজেদের নিরাপত্তা নিয়েও উদ্বিগ্ন। নানাভাবে হুমকিও আসছে।”

শহীদ কর্নেল কুদরত ইলাহী রহমান শফিকের পুত্র সাকিব রহমান বলেন, “জামিন পাওয়া মানেই নির্দোষ হওয়া নয়। গণমাধ্যমে তাঁদের ‘ভিকটিম’ হিসেবে উপস্থাপন করা শহীদ পরিবারগুলোর জন্য অপমানজনক।”

শহীদ মেজর মো. আব্দুস সালাম খানের সন্তান সাকিব মাহমুদ খান প্রীতমও একই ধরনের উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “যাঁরা এই অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন, তাঁদের মুক্তির দাবি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।”

গত বুধবার রাজধানীর মহাখালীর রাওয়া ক্লাবে শহীদ সেনা পরিবারগুলোর সদস্যরা সংবাদ সম্মেলন করে এই ঘটনায় ন্যায়বিচারের দাবি জানান। তাঁরা বলেন, “বিডিআর কোর্টের সাজা নিয়ে প্রশ্ন করা মানে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকে প্রশ্নবিদ্ধ করা। সাজাপ্রাপ্ত অপরাধীদের প্রাপ্য সাজা অবিলম্বে কার্যকর করা হোক।”

সংবাদ সম্মেলনে শহীদ লেফটেন্যান্ট কর্নেল লুত্ফর রহমান খান এএমসির মেয়ে ডা. ফাবলিহা বুশরা বলেন, “এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করতে হলে প্রকৃত অপরাধীদের চিহ্নিত করে দ্রুত বিচার করতে হবে।”

২০০৯ সালের এই হত্যাকাণ্ডের পর বিডিআর সদস্যদের বিরুদ্ধে হত্যা, বিদ্রোহ, লুটপাট এবং নির্যাতনের অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়। ২০১৩ সালে হত্যা মামলায় ১৫২ জনের ফাঁসি, ১৬০ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তবে হাইকোর্টের রায়ে কিছু আসামির সাজা কমে যায় এবং কিছু খালাস পান।

শহীদ পরিবারগুলোর দাবি, পিলখানা হত্যাকাণ্ডের পেছনে যারা ষড়যন্ত্রকারী ছিল, তাদের চিহ্নিত করে দ্রুত বিচার করা হোক। এছাড়া ২৫ ফেব্রুয়ারিকে “জাতীয় শহীদ সেনা দিবস” হিসেবে ঘোষণা করারও দাবি জানানো হয়েছে।

এই ঘটনা শুধু সেনা পরিবারগুলোর জন্য নয়, পুরো জাতির জন্য একটি বেদনাদায়ক স্মৃতি। শহীদ পরিবারগুলোর ব্যথা ও ক্ষোভ জাতির বিবেককে নাড়া দিয়েছে। তাদের দাবিগুলো ন্যায়বিচার ও মানবিকতার দৃষ্টিকোণ থেকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা উচিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button