বিএনপি ও জামায়াতের দ্বন্দ্ব: দীর্ঘদিনের মিত্রতা থেকে মতবিরোধ
বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিএনপি ও জামায়াতের দীর্ঘদিনের মিত্রতা রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রভাব বিস্তার করলেও সাম্প্রতিক সময়ের ঘটনাগুলোতে তাদের মধ্যে মতবিরোধ প্রকট হয়ে উঠেছে। ইসলামী ব্যাংক দখল, রাজনৈতিক বক্তব্য ও নির্বাচনী নীতির ভিন্নতার কারণে এ বিরোধ নতুন মাত্রা পেয়েছে।
গণ-অভ্যুত্থানের পর বিরোধের সূচনা:
গণ-অভ্যুত্থানের পর ইসলামী ব্যাংক দখলকে কেন্দ্র করে দুই দলের মধ্যে বিরোধের শুরু। জামায়াত বিএনপির বিরুদ্ধে দেশব্যাপী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার অভিযোগ তোলে। পাল্টা অভিযোগে বিএনপি জামায়াতের নেতাকর্মীদের চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজির সঙ্গে জড়িত থাকার কথা বলে।
বক্তব্য ও পাল্টা বক্তব্যের তীব্রতা:
১. বিএনপির অভিযোগ:
বিএনপি নেতা রুহুল কবীর রিজভী জামায়াতের কর্মকাণ্ডকে সরাসরি সমালোচনা করেন।
২. জামায়াতের প্রতিক্রিয়া:
জামায়াত তাদের বিবৃতিতে বিএনপির নেতৃত্বে থাকা ২০১৮ সালের নির্বাচনের মোনাফেকি উল্লেখ করে পাল্টা সমালোচনা করে।
৩. পরস্পরকে দোষারোপ:
বিএনপি জামায়াতকে রাজনৈতিক ফাঁদে পা দেওয়া দল হিসেবে আখ্যা দেয়, আর জামায়াত বিএনপিকে ক্ষমতায় যাওয়ার অযোগ্য বলে সমালোচনা করে।
নির্বাচন নিয়ে দুই মেরুতে দুই দল:
বিএনপি নির্বাচনের রোডম্যাপ নিয়ে সরব থাকলেও জামায়াত এ বিষয়ে নীরব ভূমিকা পালন করছে। বিজয় দিবসে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে নির্বাচনী রোডম্যাপ না থাকায় বিএনপি অসন্তোষ প্রকাশ করলেও জামায়াত এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
টানাপড়েনের বর্তমান অবস্থা:
বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে সম্পর্ক এখন বেশ নাজুক। দুই দলের নেতারা প্রকাশ্যে একে অপরের বিরুদ্ধে বিষোদগার করছেন। তবে জামায়াত নেতারা বলছেন, তারা বিএনপির সঙ্গে কোনো বিভাজন চান না। অন্যদিকে, বিএনপি মনে করে জামায়াতের নেতৃত্বে গঠিত নতুন জোট তাদের কোণঠাসা করার কৌশল।
বিএনপি ও জামায়াতের সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের বিভিন্ন মতামত রয়েছে। অতীতে মতবিরোধ সত্ত্বেও দুই দল মিত্রতা বজায় রেখেছে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে দল দুটির মধ্যে সম্পর্ক উষ্ণ হবে কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে।
দীর্ঘদিনের মিত্র বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যকার এই টানাপড়েন বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন দিক উন্মোচন করছে। তাদের সম্পর্কের অবনতির ফলে দেশের রাজনৈতিক ভারসাম্যে পরিবর্তনের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।