জুলাই অভ্যুত্থান বইমেলায় এনেছে নতুন তাৎপর্য: প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস

জুলাই অভ্যুত্থান বইমেলায় এনেছে নতুন তাৎপর্য: প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস
অমর একুশে বইমেলা ২০২৫-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য

ঢাকা, – অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, জুলাই অভ্যুত্থান এবারের অমর একুশে বইমেলায় নতুন তাৎপর্য নিয়ে এসেছে। গতকাল শনিবার বিকেলে রাজধানীর বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে আয়োজিত অমর একুশে বইমেলা ২০২৫-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে অর্জিত বিজয় নিয়ে এসেছে ‘নতুন বাংলাদেশ’ গড়ার ইস্পাত কঠোর প্রতিজ্ঞা। তাই মহান আত্মত্যাগের মাধ্যমে অর্জিত অভ্যুত্থান এবারের বইমেলায় নতুন তাৎপর্য নিয়ে আমাদের সামনে এসেছে।” তিনি আরও বলেন, “গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে জাতির ঘাড়ে দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে চেপে থাকা স্বৈরাচার সরকারের পতন ঘটেছে। আমাদের সাহসী তরুণদের এই অভূতপূর্ব আত্মত্যাগ বিশ্বকে চমকে দিয়েছে।”

জুলাইয়ে ছাত্রদের নেতৃত্বে গণ-অভ্যুত্থানে যেসব দুঃসাহসী ছাত্র-জনতা ও শ্রমিক প্রাণ দিয়েছে এবং নির্মমভাবে আহত হয়েছে, তাদের গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন অধ্যাপক ইউনূস। এবারের অমর একুশে বইমেলার মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থান এবং তার মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশের বিনির্মাণ’।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “বরাবরই একুশে মানে জেগে ওঠা। একুশে মানে আত্মপরিচয়ের সঙ্গে মুখোমুখি হওয়া। একুশে মানে অবিরাম সংগ্রাম। নিজের পরিধিকে আরো অনেক বাড়িয়ে নেওয়া। এবারের একুশের প্রেক্ষিত আমাদের নতুন দিগন্তে প্রতিস্থাপন করেছে।” তিনি আরও বলেন, “একুশ আমাদের মূল সত্তার পরিচয়। একুশ আমাদের ঐক্যের দৃঢ় বন্ধন। এই বন্ধন ছোট-বড়, যৌক্তিক-অযৌক্তিক, ক্ষণস্থায়ী-দীর্ঘস্থায়ী সব দূরত্বের ঊর্ধ্বে।”

মাত্র ছয় মাস আগে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান জাতিকে এক ঐতিহাসিক গভীরতায় ঐক্যবদ্ধ করে দিয়েছে উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, “যার কারণে আমরা অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, প্রাতিষ্ঠানিক ও মানবিক দিক থেকে বিধ্বস্ত একটি দেশকে দ্রুততম গতিতে আবার অভীষ্ট গন্তব্যে পৌঁছাতে নিজেদের তৈরি করার জন্য প্রস্তুতি নিতে সাহস খুঁজে পেয়েছি।”

তিনি বলেন, “একুশের টান বয়সের ঊর্ধ্বে। প্রজন্মের ঊর্ধ্বে। একুশের টান প্রজন্মের পর প্রজন্ম বিস্তৃত হয়েছে, শুধু তা-ই নয়, এই টান গভীরতর হয়েছে। আমাদের দুঃসাহসী করেছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান তারই জ্বলন্ত প্রমাণ। দুঃস্বপ্নের বাংলাদেশকে ছাত্র-জনতা নতুন বাংলাদেশে রূপান্তর করার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। তারা অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখিয়েছে।”

অধ্যাপক ইউনূস আরও বলেন, “বরকত, সালাম, রফিক, জব্বারের বুকের রক্তে যে অঙ্গীকার মাখা ছিল; তাতে ছিল জুলাই অভ্যুত্থানকে নিশ্চিত করার মহাবিস্ফোরক শক্তি। অর্ধশতাব্দী পর এই মহাবিস্ফোরণ গণ-অভ্যুত্থান দেশকে পাল্টে দিয়েছে। এই বিস্ফোরণ আমাদের মধ্যে ‘নতুন বাংলাদেশ’ গড়ার প্রত্যয় গ্রোথিত করে দিয়েছে। ১৭ কোটি মানুষের প্রতিজনের সত্তায় এই প্রত্যয় গভীরভাবে গ্রোথিত। অমর একুশের এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমরা এই প্রত্যয়ে শপথ নিতে এসেছি।”

বইমেলা আমাদের জাতীয় জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “ক্রমেই এর গুণগত ও আয়োজনগত বিবর্তন হতেই থাকবে। বইমেলায় হাজির করার জন্য লেখক-লেখিকারা সারা বছর প্রস্তুতি নিতে থাকেন যথাসময়ে নিজ নিজ বই সমাপ্ত করার জন্য। প্রকাশকরা অনেক আয়োজন করেন নিজেদের বইগুলো যথাসময়ে হাজির করার জন্য, গুণগত প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করার জন্য এবং আগ্রহ বাড়ানোর জন্য প্রতিবছর বিষয়ভিত্তিক ‘সেরা লেখক’ স্বীকৃতির আয়োজন করলে লেখকরা এই স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য এবং সেরা লেখকরা সেরা প্রকাশক পাওয়ার জন্য অনেক সহায়ক হবে।”

অমর একুশের বইমেলার পরিসর আরো বৃহত্তর পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আমরা যদি একুশের ভাষা আন্দোলনকে আরো গভীরতর প্রেক্ষিতে স্বাধিকার আন্দোলন হিসেবেও দেখি তাহলে অমর একুশের গণ্ডি বৃহত্তর হয়ে দাঁড়ায়। তখন আমরা ভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণীদের তাদের সৃজনশীলতার জন্য স্বীকৃতি দিতে পারি, নতুন উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য স্বীকৃতি দিতে পারি।”

বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রাঙ্গণে মাসব্যাপী এই বইমেলা চলবে। প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা এবং সরকারি ছুটির দিনে সকাল ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলা সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।