কুমিল্লায় মুক্তিযোদ্ধা হেনস্তা: জাতির কাছে বিচার চাইলেন আবদুল হাই কানু
কুমিল্লায় মুক্তিযোদ্ধা হেনস্তা: জাতির কাছে বিচার চাইলেন আবদুল হাই কানু
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের বাতিসা ইউনিয়নের কুলিয়ারা এলাকায় বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই কানুকে গলায় জুতার মালা পরিয়ে হেনস্তা করার ঘটনায় তীব্র নিন্দার ঝড় উঠেছে। মুক্তিযোদ্ধা কানু বলেছেন, “আমাকে বিবস্ত্র করার চেষ্টা করা হয়েছে, যা পুরো জাতির মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ওপর আঘাত। আমি এর বিচার চাই।”
ঘটনার বিবরণ
রবিবার (২২ ডিসেম্বর) দুপুরে জামায়াত-সমর্থিত প্রবাসী আবুল হাশেমের নেতৃত্বে ১০-১২ জনের একটি দল মুক্তিযোদ্ধা কানুকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে। বাজারের একটি ফার্মাসিতে ডায়াবেটিস ও প্রেশার পরীক্ষা করার সময় হামলাকারীরা তাকে জোর করে কুলিয়ারা স্কুল মাঠে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে হুমকি দিয়ে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করার চেষ্টা করা হয়।
তিনি অভিযোগ করেন, “তারা বলেছে, ‘এলাকা ছেড়ে চলে যাও। না হলে টুকরো টুকরো করে ফেলব।’ আমার গলা ধরে টানাটানি করা হয়েছে, পানিতে চুবানোর হুমকি দেওয়া হয়েছে, লাথি-ঘুষি মারা হয়েছে, এমনকি জুতার মালা পরিয়ে অসম্মান করা হয়েছে।”
জাতির কাছে বিচার দাবি
বীর মুক্তিযোদ্ধা কানু বলেন, “আমার সঙ্গে যা করা হলো, তা দেশের সব মুক্তিযোদ্ধাকে অপমান করার শামিল। আমি জাতির কাছে এই অপমানের বিচার চাই।”
তিনি আরও বলেন, “সরকারের সময়ে যদি মুক্তিযোদ্ধারা এভাবে হেনস্তার শিকার হয়, তাহলে তারা কোথায় দাঁড়াবে? আমি কোথায় দাঁড়াব?”
আব্দুল হাই কানু দীর্ঘ ৮ বছর এলাকাছাড়া ছিলেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হকের সঙ্গে রাজনৈতিক বিরোধের জেরে তিনি নিজ গ্রাম ছেড়ে যেতে বাধ্য হন।
ঘটনার পর থেকে নিরাপত্তার কারণে মুক্তিযোদ্ধা কানু ফেনীতে তার ছেলের বাসায় অবস্থান করছেন। ফেনী জেনারেল হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তিনি বলেন, “পুলিশ নিরাপত্তা নিশ্চিত করলে আমি নিজ গ্রামে ফিরে যাব।”
ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর দেশজুড়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণকারী সংগঠনগুলো দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছে।
পুলিশ ঘটনাটি তদন্ত করছে এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে। তবে এখনও কেউ গ্রেপ্তার হয়নি বলে জানা গেছে।
এই ঘটনার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং দেশের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সম্মান রক্ষার গুরুত্ব আবারও সামনে এসেছে। জাতি এখন এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার প্রত্যাশা করছে।