আন্তজার্তিক অঙ্গন

পাকিস্তানের বেলুচিস্তানে অভিযানে ২৩ সন্ত্রাসী নিহত, নিরাপত্তা বাহিনীর ১৮ সদস্যও প্রাণ হারিয়েছেন

পাকিস্তানের বেলুচিস্তানে অভিযানে ২৩ সন্ত্রাসী নিহত, নিরাপত্তা বাহিনীর ১৮ সদস্যও প্রাণ হারিয়েছেন

কালাত/ইসলামাবাদ, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪: পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশের কালাত জেলায় নিরাপত্তা বাহিনীর দুটি পৃথক অভিযানে কমপক্ষে ২৩ জন সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে। তবে শুক্রবার রাতে মাঙ্গোচর শহরে অভিযানের সময় সন্ত্রাসীদের হামলায় আধাসামরিক বাহিনী ফ্রন্টিয়ার কর্পসের (এফসি) ১৮ সদস্য নিহত হন। পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) শনিবার এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

আইএসপিআরের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, শুক্রবার রাতে মাঙ্গোচর শহরে সন্ত্রাসীরা রাস্তা অবরোধ করার চেষ্টা করলে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়। এ সময় ১৮ জন এফসি সদস্য নিহত হন। এরপর শনিবার হরনাই জেলায় পরবর্তী অভিযানে আরও ১১ জন সন্ত্রাসী গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়। এভাবে মোট নিহত সন্ত্রাসীর সংখ্যা দাঁড়ায় ২৩ জনে।

আইএসপিআর জানায়, শত্রু শক্তির ইন্ধনে পরিচালিত এই সন্ত্রাসী হামলার উদ্দেশ্য ছিল বেলুচিস্তানের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিঘ্নিত করা এবং নিরীহ বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্যবস্তু করা। তবে নিরাপত্তা বাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দ্রুত মোতায়েন হয়ে সন্ত্রাসীদের এই ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দেয়।

নিরাপত্তা বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এই অভিযানে প্রথমে ১২ জন সন্ত্রাসী নিহত হয়, যা স্থানীয় বাসিন্দাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে। তবে এ সময় ১৮ জন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যও প্রাণ হারান। আইএসপিআর তাদের “দেশের সাহসী সন্তান” বলে উল্লেখ করে জানায়, তারা বীরত্বের সঙ্গে লড়াই করে শহীদ হয়েছেন।

আইএসপিআর আরও জানায়, এই কাপুরুষোচিত হামলার পরিকল্পনাকারী ও তাদের সহযোগীদের বিচারের আওতায় আনা না পর্যন্ত অভিযান অব্যাহত থাকবে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “নিরাপত্তা বাহিনী বেলুচিস্তানের শান্তি, স্থিতিশীলতা ও অগ্রগতি রক্ষায় দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। আমাদের সাহসী সেনাদের আত্মত্যাগ আমাদের সংকল্পকে আরও শক্তিশালী করেছে।”

এদিকে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি নিরাপত্তা বাহিনীর ১৮ সদস্যের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে তিনি শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান এবং তাদের উচ্চ মর্যাদার জন্য প্রার্থনা করেন। এ ছাড়া শোকসন্তপ্ত পরিবারগুলোর প্রতি সমবেদনা জানিয়ে তিনি তাদের ধৈর্য ধারণের জন্য প্রার্থনা করেন।

এই ঘটনা এমন এক সময়ে ঘটল, যখন এর আগের দিন খাইবারপাখতুনখোয়া প্রদেশে পাঁচটি পৃথক অভিযানে নিরাপত্তা বাহিনী ১০ জন সন্ত্রাসীকে হত্যা করে। ২০২১ সালে আফগানিস্তানে তালেবান ক্ষমতায় ফেরার পর পাকিস্তানে সহিংসতা বৃদ্ধি পেয়েছে, বিশেষ করে সীমান্তবর্তী খাইবারপাখতুনখোয়া ও বেলুচিস্তান প্রদেশে।

২০২৪ সাল পাকিস্তানের বেসামরিক ও সামরিক বাহিনীর জন্য এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে প্রাণঘাতী বছর হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। সেন্টার ফর সিকিউরিটি অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (সিআরএসএস) বার্ষিক নিরাপত্তা প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছর পাকিস্তানে নিরাপত্তা বাহিনীর কমপক্ষে ৬৮৫ সদস্য নিহত হয়েছেন এবং ৪৪৪টি সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে। এ ছাড়া বেসামরিক ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য মিলিয়ে মোট এক হাজার ৬১২ জন নিহত হয়েছেন, যা ২০২৩ সালের তুলনায় ৬৬ শতাংশ বেশি।

সহিংসতার এই প্রবণতা বিশেষভাবে প্রভাব ফেলেছে খাইবারপাখতুনখোয়া ও বেলুচিস্তান প্রদেশে, যেখানে গত বছর যথাক্রমে এক হাজার ৬১৬ ও ৭৮২ জন নিহত হয়েছেন। ২০২৪ সালে পাকিস্তানে মোট দুই হাজার ৫৪৬ জন নিহত এবং দুই হাজার ২৬৭ জন আহত হয়েছেন, যা দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতির জন্য এক অশুভ বছর হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

সূত্র: জিও নিউজ, আইএসপিআর ও সিআরএসএস।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button