ভাষা আন্দোলন বাঙালির মুক্তিসংগ্রামের চেতনা বহন করে: অধ্যাপক ইউনূস

ভাষা আন্দোলন বাঙালির মুক্তিসংগ্রামের চেতনা বহন করে: অধ্যাপক ইউনূস
ঢাকা, ২৩ ফেব্রুয়ারি: জাতির মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাসে ভাষা আন্দোলনের গুরুত্ব অপরিসীম বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, “বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারি শুধু বেদনার্ত অতীত স্মরণ নয়, বরং সব ধরনের অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর প্রেরণা। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি দিতে আমাদের চরম আত্মত্যাগ করতে হয়েছে।”
শুক্রবার (২২ ফেব্রুয়ারি) ঢাকার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস-২০২৫ উপলক্ষে আয়োজিত চার দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মাতৃভাষার গুরুত্ব ও সংরক্ষণ
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “মাতৃভাষা যেকোনো জাতির ইতিহাস, অর্থনীতি ও সংস্কৃতির বাহক। মানুষের আত্মার সঙ্গে এর সম্পর্ক। মাতৃভাষার পর যত ভাষাই শিখি না কেন, মাতৃভাষার স্থান হৃদয়ের গভীরে অটুট থাকে।”
তিনি আরও বলেন, “ভাষার প্রতি আকর্ষণ সৃষ্টি করতে হলে সাহিত্য, প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানকে গুরুত্ব দিতে হবে। যে দেশের প্রযুক্তি এগিয়ে যায়, তার ভাষাও বিশ্বে গুরুত্ব পায়। যেমন, মহাকাশে স্পুটনিক পাঠানোর পর রাশিয়ান ভাষার প্রতি বিশ্বব্যাপী আগ্রহ বেড়েছিল, চীনের প্রযুক্তিগত অগ্রগতির পর চীনা ভাষা শেখার আগ্রহও বেড়েছে।”
বহুভাষা শিক্ষা ও প্রযুক্তির গুরুত্ব
একাধিক ভাষা শেখার ফলে মাতৃভাষায় দুর্বল হওয়ার ধারণাকে ভুল উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “পৃথিবীর বহু দেশে নাগরিকরা স্বাভাবিকভাবে একাধিক ভাষায় কথা বলে। শৈশব থেকে তারা বিভিন্ন ভাষার সঙ্গে পরিচিত হয়। আমাদের শিক্ষার্থীদের জন্যও অন্তত একটি ভিন্ন ভাষা শেখা বাধ্যতামূলক করা যেতে পারে।”
সম্মাননা প্রদান
অনুষ্ঠানে শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের সভাপতিত্বে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী।
এতে আরও বক্তব্য দেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়ের, ইউনেসকোর বাংলাদেশ প্রধান সুসান ভিজ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান। মাতৃভাষার সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও গবেষণায় অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে দুজন বিশিষ্ট ব্যক্তি ও ফ্রান্সে বাংলাদেশ দূতাবাসকে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা হয়।