বিএনপি-ছাত্র আন্দোলন দূরত্ব: নির্বাচন ও সংস্কার ইস্যুতে তীব্র মতপার্থক্য
বিএনপি-ছাত্র আন্দোলন দূরত্ব: নির্বাচন ও সংস্কার ইস্যুতে তীব্র মতপার্থক্য
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের ছয় মাসের মধ্যেই অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে বিএনপির দূরত্ব আরও প্রকট হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে নির্বাচন ও সংস্কার ইস্যুতে ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের সঙ্গে বিএনপির মতপার্থক্য স্পষ্ট হয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের বক্তব্যে এই বিভেদ আরও সামনে এসেছে। নির্বাচনকালীন সরকার ও সংস্কার নিয়ে দুই পক্ষই ভিন্ন অবস্থান প্রকাশ করেছে।
নির্বাচন ইস্যুতে ভিন্নমত
মির্জা ফখরুল বলেছেন, “আমরা চাই দ্রুততম সময়ের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন।” অন্যদিকে নাহিদ ইসলাম মন্তব্য করেছেন, “গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে এই সরকার এসেছে, কেবল নির্বাচন নয়, বিচার ও সংস্কার করাও এর কাজ।”
বিশ্লেষকদের মতে, নির্বাচনের সময়সীমা ও সংস্কার নিয়ে এই মতপার্থক্যই দুই পক্ষের মধ্যে আস্থার সংকট তৈরি করেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জোবাইদা নাসরীন মনে করেন, “বিএনপি মনে করছে তাদের ক্ষমতায় আসতে বাধা দিতে কিছু মহল কাজ করছে।”
রাষ্ট্রপতি ও জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে বিতর্ক
রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ ও জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে দাবি উঠলেও বিএনপি এই বিষয়ে ভিন্ন অবস্থান নিয়েছে। মির্জা ফখরুল বলেন, “রাষ্ট্রপতিকে অপসারণের কোনো সাংবিধানিক ভিত্তি নেই।” তবে নাহিদ ইসলাম অভিযোগ করেন, “বিএনপি শঠতা করে রাষ্ট্রপতি পরিবর্তন ও জুলাই ঘোষণাপত্রে বাধা দিয়েছে।”
ছাত্রদের দল গঠন নিয়ে প্রশ্ন
বিএনপির নেতারা মনে করেন, ছাত্রদের রাজনৈতিক দল গঠনের আগে সরকারের কাছ থেকে বেরিয়ে আসা উচিত। মির্জা ফখরুল বলেন, “সরকারের কোনো সাহায্য ছাড়া দল গঠন করা উচিত।” নাহিদ ইসলাম এর জবাবে বলেছেন, “সরকারে থেকে কেউ নির্বাচনে অংশ নেবে না।”
বিএনপি-ছাত্র আন্দোলন আস্থার সংকট
বিশ্লেষক মোহাম্মদ মুজিবুর রহমান বলেন, “ছাত্ররা সংস্কার বাস্তবায়নে বিএনপির ওপর সন্দেহ করছে, আবার বিএনপি উদ্বিগ্ন ছাত্ররা কতদূর যেতে চায় তা নিয়ে।”
এছাড়া, আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া নিয়েও ছাত্রদের সঙ্গে বিএনপির মতবিরোধ রয়েছে। আন্দোলনকারী ছাত্ররা এ বিষয়ে কড়া অবস্থান নিলেও বিএনপি বলেছে, “আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত জনগণের।”
নির্বাচন, সংস্কার, এবং রাষ্ট্রপতি ইস্যুতে বিএনপি ও ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের মধ্যকার মতবিরোধ দিন দিন গভীর হচ্ছে। এ পরিস্থিতি সমাধানে উভয় পক্ষের মধ্যে আলোচনা প্রয়োজন বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।