বাংলাদেশে অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতায় বিনিয়োগকারীদের আস্থা হ্রাস: ‘ওয়েট অ্যান্ড ওয়াচ’ নীতি গ্রহণ
বাংলাদেশে অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতায় বিনিয়োগকারীদের আস্থা হ্রাস: ‘ওয়েট অ্যান্ড ওয়াচ’ নীতি গ্রহণ
ঢাকা, ২৪ জানুয়ারি ২০২৫:
বাংলাদেশ গত কয়েক বছর ধরে অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। বিনিয়োগকারীরা এখন বড় অঙ্কের বিনিয়োগ করার আগে দেশের নীতিমালা সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট ধারণা পেতে চান। বিশেষত, গত বছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল থাকায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থার ঘাটতি তৈরি হয়েছে।
দেশীয় বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও এই অবস্থায় বিনিয়োগের বিষয়ে নিরুৎসাহী হয়ে পড়েছেন। বর্তমানে তারা ‘ওয়েট অ্যান্ড ওয়াচ’ নীতি গ্রহণ করে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন।
নীতি পরিবর্তন ও বিনিয়োগ সংকট
বিনিয়োগকারীরা মনে করেন, দীর্ঘমেয়াদি ও স্থিতিশীল নীতিমালা অর্থনৈতিক উন্নয়নের পূর্বশর্ত। কিন্তু দেশে ঘন ঘন নীতির পরিবর্তন, যেমন—বিভিন্ন পণ্যে ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধি বিনিয়োগকারীদের আস্থায় আঘাত হেনেছে।
সম্প্রতি কোনো ধরনের গবেষণা বা অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই ভ্যাট ও শুল্ক বৃদ্ধি করা হয়। এর ফলে দেশে ব্যবসা পরিচালনার খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা ভোক্তার ক্রয়ক্ষমতা হ্রাসের পাশাপাশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা হারানোর অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
দেশে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগে (এফডিআই) নেতৃত্ব দেওয়া সংগঠন ফরেন ইনভেস্টরস’ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ফিকি) দেশের মোট এফডিআইয়ের ৯০ শতাংশের প্রতিনিধিত্ব করে। তামাক, টেলিযোগাযোগ, জ্বালানি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ এই সংগঠন উচ্চ রাজস্ব প্রদানকারী খাতগুলো পরিচালনা করে।
ফিকির মতে, ভ্যাট ও শুল্ক বৃদ্ধির কারণে দেশের ব্যবসা পরিবেশের স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে পড়েছে। ভোক্তার ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পাওয়ায় সরকার বড় অঙ্কের রাজস্ব হারাতে পারে।
ফিকির সভাপতি এবং ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনে করেন, নীতি প্রণয়ন ও পরিবর্তনের আগে যথাযথ গবেষণা এবং অংশীজনদের সঙ্গে পরামর্শ করা জরুরি।
তিনি আরও বলেন, “যৌথ অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে স্থিতিশীল ব্যবসার পরিবেশ নিশ্চিত করতে আমরা সরকারের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছি। তবে সাম্প্রতিক ভ্যাট ও শুল্ক বৃদ্ধির মতো সিদ্ধান্ত এই অংশীদারিত্বের যাত্রায় উল্লেখযোগ্য ব্যত্যয় ঘটিয়েছে।”
দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল করতে এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা পুনরুদ্ধারে সরকারের উচিত টেকসই আর্থিক নীতি প্রণয়ন। বিদেশি ও দেশীয় বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে দীর্ঘমেয়াদি ও যৌক্তিক নীতিমালা গ্রহণ এখন সময়ের দাবি।