সারাদেশ

খুলনায় জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে বিক্ষোভ, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ: পরিস্থিতি সামাল দিতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন

শনিবার সন্ধ্যায় খুলনা নগরের ডাকবাংলা মোড়ে জাতীয় পার্টির খুলনা মহানগর ও জেলা কার্যালয়ে বিক্ষোভ, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয় এলাকাবাসী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানা গেছে, সন্ধ্যা ছয়টার দিকে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা একটি মিছিল নিয়ে এসে কার্যালয়টির সামনে অবস্থান নেয়। এরপর তারা জাতীয় পার্টির কার্যালয়ের সাইনবোর্ড ভেঙে ফেলে এবং ভিতরে প্রবেশ করে চেয়ার-টেবিলসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র ভাঙচুর করে। পরে তারা এসব মালামাল বাইরে এনে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ ঘটনার পর এলাকায় তীব্র আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে আশপাশের দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়।বিক্ষোভকারীদের মধ্যে অনেকেই জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে নানা স্লোগান দেয়। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনকারীদের দাবি-দাওয়া নিয়ে জাতীয় পার্টির অবস্থানের প্রতি অসন্তোষ থেকেই এ ধরনের হামলা হতে পারে। তবে এই ঘটনাটি খুলনায় রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রভাবও তুলে ধরেছে, যা নিয়ে স্থানীয় মানুষ উদ্বিগ্ন।

খুলনার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সাজিদুল ইসলাম জানান, উত্তেজিত জনতা জাতীয় দালাল এবং ফ্যাসিস্ট শাসনের সহযোগী হিসেবে জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে এই হামলা চালিয়েছে। তবে তিনি স্পষ্টভাবে জানান যে, এ ঘটনার সাথে তাদের সংগঠনের কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা নেই।

খুলনা জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি শফিকুল ইসলাম এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, ‘হামলার সময় আমাদের কার্যালয়ে কেউ উপস্থিত ছিল না, তাই মাগরিবের নামাজের সময় ৫০-৬০ জনের একদল ছাত্র-যুবক এসে কার্যালয়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। পরে তারা ভেতরে ঢুকে সাইনবোর্ড, চেয়ার, টেবিল, ফ্যান, টিভি এবং অন্যান্য আসবাব ভাঙচুর করে। এ ছাড়া কিছু গুরুত্বপূর্ণ ফাইল এবং কাগজপত্রও তারা নিয়ে যায়। ঘটনাস্থলে পুড়িয়ে ফেলা চেয়ার ও ব্যানারগুলি আমাদের সংগঠনের মালামাল ছিল।’ তিনি দ্রুত এই ঘটনা তদন্ত করে দায়ীদের গ্রেপ্তার এবং আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।

খুলনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মনিরুল গিয়াস জানিয়েছেন, সন্ধ্যা ছয়টার দিকে ছাত্র-যুবকদের একটি দল মিছিল নিয়ে এসে জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে অতর্কিত হামলা চালায়। তারা কার্যালয়ের সামনে এবং ভেতরে ইটপাটকেল ছোড়ে এবং পরে দুটি প্লাস্টিকের চেয়ার বাইরে এনে অগ্নিসংযোগ করে। এখনো এই হামলার পেছনে কে বা কারা যুক্ত, তা সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি। ঘটনার পরই অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে এবং পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করে তদন্ত শুরু করেছে।

বিক্ষোভের সময় আশপাশের দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায় এবং এলাকায় আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, তারা এই ধরনের রাজনৈতিক সহিংসতায় উদ্বিগ্ন এবং আশা করেন যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দ্রুত ব্যবস্থা নেবে। একাধিক ব্যবসায়ীও জানান, এই ধরনের ঘটনা তাদের ব্যবসায় প্রভাব ফেলে এবং তারা এই ধরনের অস্থিরতা বন্ধের জন্য প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ কামনা করছেন।

পুলিশ ইতিমধ্যে ভিডিও ফুটেজ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য সংগ্রহ শুরু করেছে। তারা বলেছে, এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত চিহ্নিত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, এ ধরনের ঘটনা দমন করতে ও ভবিষ্যতে শান্তি বজায় রাখতে তারা সজাগ রয়েছেন।খুলনায় সম্প্রতি বেশ কিছু রাজনৈতিক ও সামাজিক আন্দোলন চলমান রয়েছে, যার মধ্যে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন অন্যতম। এই আন্দোলনের প্রেক্ষাপটেই জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন যে, খুলনার মতো নগরীতে ছাত্র ও যুবকদের এই ধরনের বিক্ষোভ রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রতিফলন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button