সারাদেশ

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের ‘রেড অ্যালার্ট’ জারির বিতর্ক: প্রকৃত ঘটনা কী?

ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধরতে ইন্টারপোল ‘রেড অ্যালার্ট’ জারি করেছে বলে প্রথমে দাবি করলেও, পরবর্তীতে এ বিষয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়। রবিবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম প্রথমে এই তথ্য জানান। তবে আধাঘণ্টার মধ্যে তিনি নিজের বক্তব্য থেকে সরে আসেন, ফলে সংবাদমাধ্যমগুলো বিভ্রান্তিতে পড়ে।

ইন্টারপোল রেড নোটিশের দাবি ও পরবর্তীকালের সংশোধনী

প্রথমে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, “ইন্টারপোলে অলরেডি রেড নোটিশ জারি হয়েছে।” তিনি আরও দাবি করেন, এটি তাদের আবেদন পাঠানোর পরপরই কার্যকর হয়েছে। তবে ইন্টারপোল বা ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (এনসিবি)-এর ওয়েবসাইটে এর কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

বিষয়টি স্পষ্ট করতে পরবর্তীতে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, “আমরা ইন্টারপোলকে রেড নোটিশ জারির জন্য অনুরোধ করেছি। কিন্তু এ বিষয়ে আপডেট জানা দরকার হলে পুলিশ সদর দপ্তরের এনসিবি শাখা থেকে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে।”

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনাসহ আরও ৪৬ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে।

  • গত ১৩ নভেম্বর প্রসিকিউটরের অফিস থেকে এনসিবির মাধ্যমে ইন্টারপোলকে রেড নোটিশ জারির অনুরোধ পাঠানো হয়।
  • প্রসিকিউটর জানান, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তদন্ত শেষ হতে আরও তিন মাস সময় লাগতে পারে।

শেখ হাসিনা বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন। তাঁকে ফেরানোর বিষয়ে চিফ প্রসিকিউটর জানান, “এটি রাষ্ট্রের বিষয়। আমাদের পক্ষ থেকে তথ্যাদি সরকারকে দেওয়া হয়েছে। ভারত-বাংলাদেশ বহিঃসমর্পণ চুক্তির আওতায় পরবর্তী পদক্ষেপ সরকারের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করছে।”

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হয়। সেদিন শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। এরপর থেকে বিভিন্ন মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে গুম, খুন, গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ জমা পড়তে থাকে।

  • মোট অভিযোগ: ১৬৮টি
  • গুমের অভিযোগ: ৩১টি
  • অধিকাংশ অভিযোগে শেখ হাসিনার নাম উল্লেখ রয়েছে।

চিফ প্রসিকিউটরের বক্তব্যের অস্পষ্টতার কারণে ইন্টারপোল রেড নোটিশের সত্যতা নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়। বিষয়টি নিয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ের মন্তব্য এবং ইন্টারপোলের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা প্রয়োজন।

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ এবং তাঁকে ধরতে আন্তর্জাতিক উদ্যোগ নিয়ে স্পষ্ট তথ্য পাওয়া গেলে বিষয়টি আরও স্বচ্ছ হবে। তবে চিফ প্রসিকিউটরের বক্তব্যের পরস্পরবিরোধিতা এই প্রক্রিয়ার বিশ্বাসযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button