সারাদেশ

জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবে উত্তাল প্রশাসনযন্ত্র

জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সাম্প্রতিক প্রস্তাব নিয়ে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে পুরো প্রশাসনযন্ত্র। কমিশনের প্রস্তাবে উপসচিব ও যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতির জন্য পরীক্ষা চালু করার পাশাপাশি প্রশাসন ক্যাডার ও অন্যান্য ক্যাডারের মধ্যে ৫০:৫০ অনুপাত প্রবর্তনের সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্যাডারকে পৃথক সংস্থায় পরিণত করার প্রস্তাবও উত্থাপন করা হয়েছে।

প্রশাসন ক্যাডারের ক্ষোভ

প্রস্তাবটি প্রকাশের পর প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন (বিএএসএ) তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। তারা দাবি করেছে, প্রশাসনের সব গুরুত্বপূর্ণ পদে শতভাগ প্রশাসন ক্যাডার থেকে নিয়োগ দেওয়া উচিত। সংগঠনটির নেতারা একে “রাষ্ট্রব্যবস্থাকে দুর্বল করার শামিল” বলে অভিহিত করেছেন।

তাদের বক্তব্য অনুযায়ী, প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা মাঠ প্রশাসন এবং নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে কাজ করে আসছেন। ফলে প্রশাসনের পদগুলোতে অন্য ক্যাডার থেকে নিয়োগ বা সমান ভাগাভাগি “অযৌক্তিক এবং বৈষম্যমূলক”

বিসিএস হেলথ ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশন কমিশনের প্রস্তাবকে “একতরফা এবং হঠকারী” বলে উল্লেখ করেছে। তাদের মতে, স্বাস্থ্য ক্যাডারের কর্মকর্তাদের বাদ দিয়ে নীতিনির্ধারণী পদে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বসানো হলে স্বাস্থ্যখাতে বিজ্ঞানভিত্তিক এবং কার্যকর সংস্কার বাধাগ্রস্ত হবে। তারা সতর্ক করে বলেছেন, স্বাস্থ্যকে ক্যাডারবহির্ভূত করা হলে “প্রশাসনিক সংস্কার পুরোপুরি ব্যর্থ হবে”

শিক্ষা ক্যাডার বাতিলের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে বিসিএস জেনারেল এডুকেশন ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশন। তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছে যে, এই প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে “শিক্ষা প্রশাসনে অস্থিরতা তৈরি হবে”। অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা জানিয়েছেন, ২০১২ সালেও এ ধরনের উদ্যোগ প্রতিহত করা হয়েছিল এবং তারা এটিকে আবারও প্রতিহত করবেন।

সংস্কার কমিশনের প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী বলেছেন, সিভিল সার্ভিসে পদোন্নতির ক্ষেত্রে “যোগ্যতাকে” অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। তার মতে, উপসচিব পদে পদোন্নতির জন্য পাবলিক সার্ভিস কমিশনের অধীনে পরীক্ষা নেওয়া হবে এবং পরীক্ষায় ৭০ নম্বর পেতে হবে।

তিনি আরও বলেন, “বর্তমানে প্রশাসন ক্যাডারের জন্য ৭৫% কোটা সংরক্ষিত রয়েছে। আমরা এটিকে ৫০% করার প্রস্তাব দিয়েছি, যাতে আন্তঃক্যাডার বৈষম্য দূর হয়।”

দেশের ৬৪ জন জেলা প্রশাসক (ডিসি) এই প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা করেছেন। তারা একে “প্রশাসন ক্যাডারের প্রতি বৈষম্যমূলক” উল্লেখ করে পৃথক কার্যবিবরণী মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছেন।

সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব নিয়ে প্রশাসন, স্বাস্থ্য এবং শিক্ষা ক্যাডারের নেতারা পৃথকভাবে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। প্রস্তাবের সমর্থনে যুক্তি দেওয়া হলেও সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর তীব্র প্রতিক্রিয়া এই সংস্কার প্রক্রিয়ার বাস্তবায়নে চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।

সরকার কীভাবে এই সমস্যার সমাধান করবে, তা সময়ই বলে দেবে। তবে প্রশাসনিক কাঠামোয় এমন বড় ধরনের পরিবর্তন আনার আগে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে সমঝোতার প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button