বিমসটেক সম্মেলনে মোদির সঙ্গে ইউনূসের বৈঠক: শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ চাইল বাংলাদেশ

বিমসটেক সম্মেলনে মোদির সঙ্গে ইউনূসের বৈঠক: শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ চাইল বাংলাদেশ
ব্যাঙ্কক, ৪ এপ্রিল:
ষষ্ঠ বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল (শুক্রবার) থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাঙ্ককের সাংরি-লা হোটেলে স্থানীয় সময় দুপুরের পর প্রায় ৪০ মিনিটব্যাপী এই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে দুই দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়, যার মধ্যে অন্যতম ছিল সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের বিষয়টি।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাংবাদিকদের জানান, বৈঠকে সীমান্ত হত্যাকাণ্ড, গঙ্গা ও তিস্তা নদীর পানিবণ্টন চুক্তি, সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার করার নানা দিক নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস বলেন, “বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে সম্পর্ককে অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়। ১৯৭১ সালে ভারতের অকুণ্ঠ সমর্থনের জন্য আমরা চিরকৃতজ্ঞ। এই ঐতিহাসিক বন্ধনকে আরও শক্তিশালী করতে আমরা দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, “ভারত সব সময় বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে এসেছে এবং ভবিষ্যতেও দেবে। আমাদের সম্পর্ক জনগণের সঙ্গে, কোনো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের সঙ্গে নয়।”
তিনি আরও জানান, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে ভারতের উদ্বেগের কথা তুলে ধরেন, যার জবাবে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, বেশিরভাগ রিপোর্টই অতিরঞ্জিত এবং ভুয়া। সত্যতা যাচাইয়ে তিনি ভারতীয় সাংবাদিকদের বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান।
ইউনূসের কাছ থেকে মোদির উপহার
বৈঠকের একপর্যায়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে একটি বিশেষ মুহূর্তের ফটোগ্রাফ উপহার দেন। ২০১৫ সালে মুম্বাইয়ে অনুষ্ঠিত ১০২তম ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসে মোদির হাতে ইউনূস যখন স্বর্ণপদক গ্রহণ করেছিলেন, সেই মুহূর্তের ছবি উপহার হিসেবে তুলে দেওয়া হয়।
সামাজিক মাধ্যমে মোদির পোস্ট
বৈঠকের পরপরই নরেন্দ্র মোদি ফেসবুক ও এক্স (সাবেক টুইটার)-এ একটি পোস্টে লেখেন,
“বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি। ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে গঠনমূলক ও জনকেন্দ্রিক সম্পর্কের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
বিমসটেকে অন্যান্য বৈঠক
বিমসটেক সম্মেলনের সাইডলাইনে অধ্যাপক ইউনূস আরও কয়েকজন আঞ্চলিক নেতার সঙ্গে বৈঠক করেন। তিনি থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রা, শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী হরিণী আমারাসুরিয়া এবং ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগের সঙ্গে পৃথক দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন।
শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রীকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার বিষয়ে সহযোগিতার অনুরোধ জানানো হয়। হরিণী জানান, এ বিষয়ে শ্রীলঙ্কার পার্লামেন্ট একটি নতুন আইন পাস করেছে এবং দেশটি আন্তরিকভাবে সহায়তা করতে প্রস্তুত।
দেশে ফিরলেন প্রধান উপদেষ্টা
থাইল্যান্ড সফর শেষে গতকাল রাত ১০টা ৫ মিনিটে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে ঢাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান অধ্যাপক ইউনূস ও তাঁর সফরসঙ্গীরা।