দেশে স্মার্টফোনের বাজার সংকটে: বিক্রি ও ইন্টারনেট ব্যবহার কমছে

দেশে স্মার্টফোনের বাজার সংকটে: বিক্রি ও ইন্টারনেট ব্যবহার কমছে
দেশে স্মার্টফোনের উৎপাদন ও আমদানি একসময় বছরে চার কোটির ওপরে থাকলেও সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক স্থবিরতার ফলে এই সংখ্যা অর্ধেকে নেমে এসেছে। একই সঙ্গে কমেছে ইন্টারনেট ব্যবহার। মূল্যস্ফীতির চাপে মানুষ কম খরচ করছে, ফলে স্মার্টফোন কেনার হারও হ্রাস পাচ্ছে।
স্মার্টফোন বিক্রিতে ধস
সংশ্লিষ্ট খাতের বিশেষজ্ঞদের মতে, ক্রমাগত মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের হাতে অতিরিক্ত খরচের টাকা নেই। তাই নতুন স্মার্টফোন কেনার পরিবর্তে পুরনো ফোন ব্যবহারের প্রবণতা বেড়েছে। অনেকেই কম দামে সেকেন্ড হ্যান্ড ও আন-অফিশিয়াল ফোনের দিকেও ঝুঁকছেন।
বিটিআরসির তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে দেশে উৎপাদিত ফিচার ও স্মার্টফোন বিক্রি হয়েছে ২ কোটি ৭২ লাখ ৮০ হাজার ইউনিট। তবে চলতি বছরের জানুয়ারিতে বিক্রি হয়েছে মাত্র ১৮ লাখ ১৯ হাজার হ্যান্ডসেট, যা ফেব্রুয়ারিতে কমে দাঁড়িয়েছে ১৩ লাখ ৮৮ হাজারে। এক মাসের ব্যবধানে বিক্রি কমেছে চার লাখ ৩১ হাজার ইউনিট।
২০২৩ সালের একই সময়ের তুলনায় এ বছর স্মার্টফোন বিক্রিতে বড় ধরনের পতন দেখা গেছে। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে বিক্রি কমেছে ৭৩ হাজার এবং ফেব্রুয়ারিতে কমেছে ৭ লাখ ৫৯ হাজার ইউনিট।
বিক্রি কমার কারণ
আইস্মার্টইউ টেকনোলজি বিডি লিমিটেডের সিইও রেজওয়ানুল হক বলেন, ‘রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর থেকে স্মার্টফোনের বিক্রি কমতে শুরু করেছে। মূল্যস্ফীতির চাপে মানুষের আয় কমেছে, পাশাপাশি কালোবাজারে ফোনের প্রবাহ বাড়ায় বাজারে সংকট তৈরি হয়েছে।’ তার মতে, স্মার্টফোন বিক্রি প্রায় ২০ শতাংশ কমে গেছে।
বিডিজবসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহিম মাশরুর বলেন, ‘দেশে অর্থনৈতিক স্থবিরতা চলছে। ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দাভাব থাকায় মানুষের হাতে বাড়তি খরচের সুযোগ নেই। ফলে শুধু স্মার্টফোন নয়, ইন্টারনেট ব্যবহারেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।’
ইন্টারনেট ব্যবহারও কমছে
বিটিআরসির তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের জুন মাসে দেশে ইন্টারনেট গ্রাহক সংখ্যা ছিল প্রায় ১৪ কোটি ২২ লাখ, যা চলতি বছরের জানুয়ারিতে কমে ১৩ কোটিতে দাঁড়িয়েছে।
গত সাত মাসে মোবাইল ফোন গ্রাহক সংখ্যা কমেছে প্রায় ৯৪ লাখ এবং ইন্টারনেট ব্যবহারকারী কমেছে এক কোটি ৩২ লাখ। বিশেষ করে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ২০২৩ সালের জুনে ছিল ১২ কোটি ৯২ লাখ, যা জানুয়ারিতে কমে ১১ কোটি ৬০ লাখ হয়েছে।
স্থানীয় উৎপাদনের সংকট ও কর ফাঁকি
২০১৮ সাল থেকে দেশেই মোবাইল সংযোজন কারখানা গড়ে উঠলেও উৎপাদিত হ্যান্ডসেটের দাম তুলনামূলক বেশি হওয়ায় গ্রাহকরা সেগুলোর প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছেন না। বর্তমানে দেশে স্থাপিত ১৭টি কারখানায় প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে, যেখানে ২৫ হাজারের বেশি শ্রমিক কাজ করছেন। কিন্তু অবৈধভাবে আমদানি করা ফোনের বাজার ক্রমশ বাড়ছে, যার ফলে সরকার প্রতি বছর প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে।
বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ফোনের মান উন্নত করা ও দাম কমালে বিক্রিতে গতি আসতে পারে। তবে অবৈধ ফোনের বিক্রি নিয়ন্ত্রণে সরকারের কার্যকর উদ্যোগ দরকার।’
স্মার্টফোন বিক্রির এই মন্দাভাব কাটিয়ে উঠতে ব্র্যান্ডগুলো নানা ছাড় ও সহজ ঋণের সুযোগ দিচ্ছে। তবে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা, দেশীয় উৎপাদন বাড়ানো ও অবৈধ আমদানির লাগাম টানার মতো উদ্যোগ না নিলে এ খাতের সংকট দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।