সারাদেশ

আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ও সংস্কার প্রক্রিয়ার অগ্রগতি

আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ও সংস্কার প্রক্রিয়ার অগ্রগতি

আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে চলমান রাজনৈতিক বিতর্কের মধ্যেই দ্রুত এগিয়ে চলছে জাতীয় নির্বাচনী প্রস্তুতি ও রাষ্ট্রের সংস্কার প্রক্রিয়া। অন্তর্বর্তী সরকার ‘সংক্ষিপ্ত সংস্কার প্যাকেজ’ বাস্তবায়নের দিকে যাবে নাকি ‘বৃহৎ সংস্কার প্যাকেজ’ নিয়ে এগোবে, তা রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের ওপর নির্ভর করছে। তবে সংশ্লিষ্ট সূত্রের মতে, সরকার শেষ পর্যন্ত ‘সংক্ষিপ্ত সংস্কার প্যাকেজ’ বাস্তবায়ন করে দ্রুত নির্বাচনের দিকে যেতে পারে। কারণ, রাষ্ট্র সংস্কারে গঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে যেসব প্রস্তাব দিয়েছে, সেগুলোর প্রতি ইতিবাচক সাড়া থাকলেও কিছু ভিন্নমতও প্রকাশ পেয়েছে।

ডিসেম্বরে নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা

গত ১৭ মার্চ পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের হাতে খুব বেশি সময় নেই। আমরা ইতোমধ্যে সাত মাস পার করেছি এবং ডিসেম্বরেই নির্বাচন হবে বলে আশা করছি।’ একইভাবে, গত ১৪ মার্চ জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসকে তিনি জানান, রাজনৈতিক দলগুলো যদি ‘সংক্ষিপ্ত সংস্কার প্যাকেজ’ নিয়ে একমত হয়, তবে নির্বাচন ডিসেম্বরেই হতে পারে। অন্যথায় ‘বৃহৎ সংস্কার প্যাকেজ’ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নির্বাচন আগামী বছরের জুন পর্যন্ত পিছিয়ে যেতে পারে।

ইসির প্রস্তুতি ও কূটনৈতিক সংলাপ

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন জানান, নির্বাচন কমিশন চলতি বছরের ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচন করার সময়সীমা অতিক্রম করতে চায় না। এই লক্ষ্যে অক্টোবরে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করার পরিকল্পনা রয়েছে। ইতিমধ্যে উন্নয়ন সহযোগী দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতরা নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছেন।

জাতীয় ঐকমত্য ও রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সংলাপে অংশ নিয়ে খেলাফত মজলিস ১৬৬টি প্রস্তাবের মধ্যে ১৪০টিতে এবং বাংলাদেশ লেবার পার্টি ১৪৭টিতে একমত প্রকাশ করেছে। আজ বিএনপি ও এনসিপি তাদের লিখিত মতামত জমা দেবে। কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ আশা প্রকাশ করেছেন যে, স্বল্প সময়ের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে জাতীয় ঐকমত্য তৈরি করা সম্ভব হবে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘সংস্কার ও নির্বাচন একসঙ্গে চলতে পারে এবং রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি সংস্কার সনদ তৈরি করা যেতে পারে, যা নির্বাচিত সরকার পরে বাস্তবায়ন করবে।’

সংলাপে অংশগ্রহণকারী দলগুলোর মতপার্থক্য

  • খেলাফত মজলিস ১৪০টি প্রস্তাবে একমত, ১০টিতে মতৈক্য হয়নি এবং ১৫টিতে আংশিকভাবে সম্মত হয়েছে। তারা গণপরিষদের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে এবং ৪০০ আসনে নারীদের সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নির্বাচনের প্রস্তাব দিয়েছে।
  • বাংলাদেশ লেবার পার্টি ১৪৭টি সুপারিশে একমত হয়েছে, ৭টিতে মতপার্থক্য রয়েছে এবং ১২টিতে আংশিকভাবে সম্মত হয়েছে। তারা দেশকে চারটি প্রদেশে ভাগ করার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে।
  • জামায়াতে ইসলামী নির্বাচনের আগে গণপরিষদ নির্বাচন চায় না এবং দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের পক্ষে মত দিয়েছে। তারা সংবিধানের মূলনীতিতে আল্লাহর প্রতি অবিচল বিশ্বাস রাখার প্রস্তাব দিয়েছে।

রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবগুলোর ওপর রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত গ্রহণের প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করে ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন সম্পন্ন করার পরিকল্পনা করছে সরকার ও নির্বাচন কমিশন। তবে বড় সংস্কার প্যাকেজ গৃহীত হলে নির্বাচন পিছিয়ে যেতে পারে। সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের আলোচনার ভিত্তিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button