সারাদেশ

কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে ইফতার, সহায়তা বাড়ানোর আহ্বান জাতিসংঘ মহাসচিবের

কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে ইফতার, সহায়তা বাড়ানোর আহ্বান জাতিসংঘ মহাসচিবের

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করেছেন এবং তাদের সঙ্গে ইফতার করেছেন। শুক্রবার (১৪ এপ্রিল) এই সফরে তিনি রোহিঙ্গাদের মানবিক সংকট এবং আন্তর্জাতিক সহায়তার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

গুতেরেস বলেন, “এটি সেই জায়গা, যেখানে বাজেট কাটছাঁটের প্রভাব সবচেয়ে বেশি অনুভূত হচ্ছে, বিশেষ করে যাদের সহায়তা পাওয়ার প্রয়োজনীয়তা সবচেয়ে জরুরি। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এখনই বিনিয়োগ করা উচিত, কারণ এই মানুষগুলো ইতিমধ্যে অসীম কষ্টের মধ্যে দিয়ে জীবন পার করছে।”

তহবিল সংকোচন নিয়ে উদ্বেগ

জাতিসংঘ মহাসচিব জানান, “২০২৫ সালে মানবিক সহায়তার জন্য বরাদ্দকৃত অর্থের মাত্র ৪০ শতাংশ পাওয়া যাবে, যা ২০২৪ সালের তুলনায় ভয়াবহ সংকট সৃষ্টি করবে। এটি সম্পূর্ণ বিপর্যয় হবে। মানুষ কষ্ট পাবে, এমনকি প্রাণও হারাতে পারে।”

তিনি আরও বলেন, জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা ও এনজিও বর্তমানে তহবিল সংকটে ভুগছে, যা রোহিঙ্গাদের মৌলিক চাহিদা পূরণে মারাত্মক প্রভাব ফেলবে। “মানুষ পর্যাপ্ত খাবার পাবে কি না, মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা মিলবে কি না, অন্যান্য জরুরি সেবা ও সুরক্ষা বজায় থাকবে কি না, তা নির্ভর করছে এই অর্থায়নের ওপর,” বলেন তিনি।

রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবর্তনের ওপর গুরুত্ব

গুতেরেস বলেন, “চূড়ান্তভাবে এই সমস্যার সমাধান মিয়ানমারেই খুঁজে বের করতে হবে। যতদিন না পর্যন্ত শরণার্থীদের স্বেচ্ছায়, নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবর্তনের উপযুক্ত পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে, ততদিন আমরা হাল ছাড়বো না।”

তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানিয়ে বলেন, “রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রতি সংহতি এখন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি প্রয়োজন, ঠিক যেমন বাংলাদেশের প্রতিও সংহতি দরকার।”

রোহিঙ্গাদের দুর্দশা ও চ্যালেঞ্জ

জাতিসংঘ মহাসচিব তার সফরে রোহিঙ্গা শিবিরের পরিস্থিতির কথা তুলে ধরে বলেন, “এই ক্যাম্পগুলো এবং আশ্রয়দানকারী স্থানীয় জনগোষ্ঠী জলবায়ু সংকটের সম্মুখভাগে রয়েছে। গ্রীষ্মকাল অসহনীয়ভাবে গরম, যার ফলে আগুন লাগার ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যায়। ঘূর্ণিঝড় ও বর্ষা মৌসুমে বন্যা ও ভূমিধস তাদের জীবনকে আরও বিপজ্জনক করে তোলে।”

তিনি বলেন, “সীমিত সুযোগের কারণে সহিংসতা, অপরাধ ও নিরাপত্তাজনিত সমস্যা বাড়ছে। কিছু রোহিঙ্গা পরিবার অনুভব করছে যে তাদের সামনে আর কোনো পথ খোলা নেই, ফলে তারা প্রাণঘাতী সমুদ্রযাত্রার ঝুঁকি নিতে বাধ্য হচ্ছে।”

বাংলাদেশের প্রশংসা ও সহায়তার আহ্বান

গুতেরেস বলেন, “আমাদের অবশ্যই বাংলাদেশের জনগণের বিশাল সহায়তার স্বীকৃতি দিতে হবে, যারা তাদের জমি, বন, সীমিত পানি ও স্বল্প সম্পদ রোহিঙ্গাদের সঙ্গে ভাগ করে নিচ্ছেন।”

তিনি আরও বলেন, “আমি এখানে এসেছি রোহিঙ্গাদের দুর্দশার পাশাপাশি তাদের সম্ভাবনার ওপরও বৈশ্বিক দৃষ্টি আকর্ষণ করতে। এই সংকটের সমাধানে সময় নষ্ট করার সুযোগ নেই, কারণ মানবিক সহায়তা বাস্তবিক পরিবর্তন আনতে পারে।”

সফরের গুরুত্ব

এই সফরে জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসও ছিলেন। তারা বিকেল ৫টা ৩৫ মিনিটে উখিয়ার শরণার্থী শিবিরে পৌঁছালে রোহিঙ্গারা তাদের উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান। পরে এক লাখের বেশি রোহিঙ্গার সঙ্গে ইফতার করেন তারা।

উল্লেখ্য, জাতিসংঘ মহাসচিব ২০১৮ সালের পর দ্বিতীয়বার কক্সবাজার সফর করলেন। চার দিনের বাংলাদেশ সফরের অংশ হিসেবে তিনি বৃহস্পতিবার ঢাকায় পৌঁছান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button