ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ডিসেম্বরেই হওয়ার সম্ভাবনা: নির্বাচন কমিশন

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ডিসেম্বরেই হওয়ার সম্ভাবনা: নির্বাচন কমিশন
ঢাকা, বুধবার: ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগামী ডিসেম্বরেই অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে নির্বাচন কমিশন (ইসি) উন্নয়ন সহযোগীদের জানিয়েছে। গতকাল (মঙ্গলবার) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি), ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং উন্নয়ন সহযোগী ১৭টি দেশের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে এক বৈঠকে এই তথ্য জানানো হয়।
প্রায় দুই ঘণ্টার বৈঠক শেষে নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, ‘আমরা ডিসেম্বরকে ধরে নিয়েই আমাদের প্রস্তুতি গ্রহণ করছি। আমাদের ভিন্ন প্রস্তুতি নেই, একটিই প্রস্তুতি—জাতীয় নির্বাচন।’
ভোটার তালিকা ও নির্বাচনী প্রস্তুতি
বৈঠকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতি সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেন। তিনি জানান, ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ চলছে এবং জাতীয় নির্বাচনের জন্য কমিশন প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ সময় ইউএনডিপি তাদের পরিকল্পনার কথা জানায় এবং উন্নয়ন সহযোগীরা কী ধরনের সহায়তা করতে পারে, সে বিষয়েও আলোচনা হয়।
জাতীয় ও স্থানীয় সরকার নির্বাচন একসঙ্গে সম্ভব নয়
বৈঠকে স্থানীয় সরকার নির্বাচন সম্পর্কে আলোচনা হয় কি না—এমন প্রশ্নের উত্তরে নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, ‘একটি প্রশ্ন এসেছিল, জাতীয় ও স্থানীয় সরকার নির্বাচন একসঙ্গে করা সম্ভব কি না। আমরা জানিয়েছি, অতীত অভিজ্ঞতা অনুযায়ী সব স্থানীয় সরকার নির্বাচনের জন্য প্রায় এক বছর সময় লাগে। ফলে জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে স্থানীয় সরকার নির্বাচন একসঙ্গে আয়োজন সম্ভব নয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচন এখন নির্বাচন কমিশনের অগ্রাধিকার। তবে সরকার যদি স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে কমিশন তা বিবেচনা করবে।’
নির্বাচনের সময়সূচি ও সম্ভাব্য তারিখ
নির্বাচনের নির্ধারিত সময় সম্পর্কে কমিশনার সানাউল্লাহ বলেন, ‘আমরা বলেছিলাম—আমাদেরকে “আর্লিয়েস্ট ডেটটা” (নিকটতম তারিখ) ধরে নিয়ে প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে। আমাদের অবস্থান এখনো অপরিবর্তিত। আমরা ডিসেম্বরকে ধরে নিয়েই আমাদের প্রস্তুতি গ্রহণ করছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা ১৬ ডিসেম্বরের বক্তব্যে বলেছিলেন, অল্প পরিমাণ সংস্কারসহ নির্বাচন হলে এটি ২০২৫ সালের ডিসেম্বরেই হতে পারে। তবে আরও সংস্কারের প্রয়োজন হলে, তা ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত গড়াতে পারে।’
‘ইতিহাসের সেরা নির্বাচন’ প্রত্যাশা
বৈঠক শেষে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) আবাসিক প্রতিনিধি স্টেফান লিলার বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন গত ডিসেম্বরে সহায়তা দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিল। সেই অনুরোধের ভিত্তিতে জানুয়ারিতে জাতিসংঘের একটি মূল্যায়নকারী দল বাংলাদেশ সফর করে। তাদের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে আমরা বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা নির্বাচন কমিশনকে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সহায়তা করছি। আশা করছি, এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে সেরা নির্বাচন হবে।’
বৈঠকে উপস্থিত বিশিষ্টজনেরা
বৈঠকে ইউএনডিপির আবাসিক প্রতিনিধি স্টেফান লিলার ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন জাপানের রাষ্ট্রদূত সাইদা শিনিচি, ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক, যুক্তরাষ্ট্রের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন, চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েনসহ ১৭টি দেশের রাষ্ট্রদূত এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিরা। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিনসহ অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার এবং ইসি সচিব বৈঠকে অংশ নেন।
নির্বাচন কমিশন আগামী জাতীয় নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করার লক্ষ্যে তাদের প্রস্তুতি অব্যাহত রেখেছে। উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে কারিগরি সহায়তা নিশ্চিত করাও কমিশনের অন্যতম অগ্রাধিকার বলে জানানো হয়।