সারাদেশ

ধানমণ্ডি ৩২-এ বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর ও শেখ হাসিনার বাসভবনে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ

ধানমণ্ডি ৩২-এ বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর ও শেখ হাসিনার বাসভবনে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ

ঢাকা, – রাজধানীর ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘরে ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের পর এক্সকাভেটর ও ক্রেন দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। একইভাবে ধানমণ্ডি ৫/এ সড়কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাসভবন সুধা সদনেও আগুন দেওয়া হয়েছে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের বাড়ি, ম্যুরাল ও প্রতিষ্ঠানে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।

গতকাল বুধবার রাতে ভারত থেকে শেখ হাসিনার অনলাইন ভাষণের প্রতিবাদে এসব ঘটনা ঘটে। এদিন শেখ হাসিনার সরকার পতনের ছয় মাস পূর্ণ হয়। রাত ৮টার পর থেকে বিপুলসংখ্যক মানুষ ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে জড়ো হয় এবং এক পর্যায়ে গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে ভাঙচুর শুরু করে। লাঠিসোঁটা ও শাবল হাতে অনেকে বাড়ির দেয়াল, জানালার গ্রিল ও ফটকের অংশ ভেঙে ফেলে। রাত ৯টার দিকে বাড়ির তৃতীয় তলায় আগুন দেওয়া হয়।

ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরের এই বাড়িটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিবিজড়িত। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট এই বাড়িতেই সপরিবারে তিনি নিহত হন। পরে বাড়িটিকে জাদুঘরে রূপান্তরিত করে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর’ নামকরণ করা হয়। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের দিনও এই বাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।

ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে ভাঙচুর চলাকালীন রাত পৌনে ১১টার দিকে সেখানে বুলডোজার ও ক্রেন পৌঁছে। মানুষের উল্লাসের মধ্যে সেগুলো দিয়ে বাড়িটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। একই সময় ধানমণ্ডি ৫/এ সড়কে শেখ হাসিনার বাসভবন সুধা সদনেও আগুন দেওয়া হয়।

এদিকে, খুলনায় শেখ মুজিবুর রহমানের ভাইয়ের বাড়ি (‘শেখবাড়ি’), বরিশালে আওয়ামী লীগ নেতা সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর বাসভবন, কুষ্টিয়ায় আওয়ামী লীগ নেতা মাহবুবউল আলম হানিফের পরিত্যক্ত বাড়ি এবং সিলেটে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে থাকা শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মাণাধীন হলের নামফলক থেকে শেখ মুজিব ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নাম সরিয়ে নতুন নাম দেওয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ ও রংপুরে শেখ মুজিবের ম্যুরাল ভাঙচুর করা হয়েছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা এসব ঘটনার দায় স্বীকার করেছেন। সংগঠনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘হাসিনাকে বক্তব্য প্রকাশের সুযোগ দেওয়াকে বাংলাদেশের ফ্যাসিবাদবিরোধী জনগণের বিরুদ্ধে ভারতের যুদ্ধ হিসেবে দেখি।’’

ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরের এই বাড়িটি বাংলাদেশের ইতিহাসের নানা চড়াই-উতরাইয়ের সাক্ষী। ১৯৬১ সালের ১ অক্টোবর থেকে শেখ মুজিব এই বাড়িতে বসবাস শুরু করেন এবং এখান থেকেই তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট এই বাড়িতেই সপরিবারে তাঁকে হত্যা করা হয়।

এসব ঘটনায় দেশজুড়ে উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর তেমন কোনো উপস্থিতি ঘটনাস্থলে দেখা যায়নি বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button