আন্তজার্তিক অঙ্গন

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ২০২৪

২০২৪ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন: ডোনাল্ড ট্রাম্প বনাম কমলা হ্যারিস – কার হাতে উঠবে ক্ষমতার মুকুট?

২০২৪ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে আমেরিকান ভোটারদের মধ্যে উত্তেজনার শেষ নেই। একদিকে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, যিনি রিপাবলিকান প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, অন্যদিকে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী ও বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস। এবারের নির্বাচন শুধু ব্যক্তিগত প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি মার্কিন রাজনীতির দিক পরিবর্তনে ভূমিকা রাখতে পারে। উভয়ের প্রচারণা কৌশল, প্রধান ইস্যুগুলি এবং ভোটারদের দৃষ্টিকোণ নিয়ে এই নিবন্ধে বিশদ আলোচনা করা হয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয়বারের মতো প্রেসিডেন্ট পদের জন্য প্রার্থী হয়েছেন। সাবেক প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার অভিজ্ঞতা এবং পুরনো সমর্থকদের নিয়ে তিনি আবারও তার প্রচারণায় ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। তার মূল প্রতিশ্রুতিগুলি হচ্ছে অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সীমান্ত সুরক্ষা, অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ, এবং আইন-শৃঙ্খলার প্রসার। অর্থনৈতিক উন্নয়ন: ট্রাম্পের প্রচারণায় একটি বড় ইস্যু হচ্ছে অর্থনীতি। তিনি ব্যবসা-বান্ধব নীতির পক্ষে, যা কর হ্রাস এবং ছোট ব্যবসাগুলোর জন্য সহজ শর্তে ঋণ সুবিধার প্রস্তাব করে। সীমান্ত সুরক্ষা ও অভিবাসন: ট্রাম্প প্রশাসন পূর্বেও কঠোর অভিবাসন নীতি গ্রহণ করেছে, এবং তিনি পুনরায় ক্ষমতায় এসে সীমান্ত সুরক্ষায় আরও কঠোর অবস্থান নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। চীনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান: আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এবং নিরাপত্তা নিয়ে চীনের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা ট্রাম্পের প্রচারণার অন্যতম অংশ। ট্রাম্পের সমর্থকরা তার কট্টর অবস্থান এবং স্বতন্ত্র নেতৃত্বকে গুরুত্ব দেন। তবে, তার নেতৃত্বকালে নেওয়া বিতর্কিত সিদ্ধান্ত এবং সাবেক প্রশাসনের কার্যক্রম নিয়ে সমালোচনার ঝড়ও রয়েছে। বিশেষত, ২০২১ সালে ক্যাপিটল হিলে সহিংসতার ঘটনাটি ভোটারদের দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রভাবিত করতে পারে। বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে কমলা হ্যারিস একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপে প্রথম নারী ও প্রথম আফ্রো-এশীয় আমেরিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। জলবায়ু পরিবর্তন, স্বাস্থ্যসেবা এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের মতো ইস্যুতে তার অবস্থান তাকে তরুণ ভোটারদের মধ্যে জনপ্রিয় করে তুলেছে। জলবায়ু পরিবর্তন: পরিবেশ সংরক্ষণ ও কার্বন নিঃসরণ কমানোর লক্ষ্য নিয়ে হ্যারিস তার প্রচারণায় জলবায়ু পরিবর্তনকে অন্যতম প্রধান ইস্যু হিসেবে তুলে ধরেছেন। সামাজিক ন্যায়বিচার: কমলা হ্যারিসের একটি বড় প্রতিশ্রুতি হল বর্ণবৈষম্য দূরীকরণ এবং পুলিশ সংস্কার। এই বিষয়গুলো তরুণ ভোটার এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সাশ্রয়ী স্বাস্থ্যসেবা: যুক্তরাষ্ট্রে সকল নাগরিকের জন্য সাশ্রয়ী স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন তিনি। তার দূরদর্শিতা এবং সমাজকল্যাণমূলক অবস্থান তাকে ডেমোক্র্যাটিক ভোটারদের কাছে জনপ্রিয় করেছে। তবে, তার প্রশাসনের অভিজ্ঞতা তুলনামূলকভাবে কম এবং কিছু বিতর্কিত সিদ্ধান্ত তার প্রচারণাকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিতে পারে।বর্তমানে বিভিন্ন জরিপের ফলাফল মিশ্র। কিছু জরিপে ডোনাল্ড ট্রাম্প এগিয়ে থাকলেও, বিশেষত তরুণ এবং সংখ্যালঘু ভোটারদের মধ্যে কমলা হ্যারিসের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। সাম্প্রতিক জরিপ অনুসারে, মেট্রো এলাকায় হ্যারিসের সমর্থন বেশি, যেখানে গ্রামীণ এলাকায় ট্রাম্পের সমর্থন প্রবল।অর্থনীতি: কর্মসংস্থান এবং জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন নিয়ে ট্রাম্প ও হ্যারিসের ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক: ট্রাম্প কঠোর অবস্থানে থেকে চীন ও ইরানের ওপর নিয়ন্ত্রণ আনতে চান। অপরদিকে, হ্যারিস আন্তর্জাতিক সংযোগ বৃদ্ধি করে কূটনৈতিক নীতির উপর জোর দিচ্ছেন। স্বাস্থ্যসেবা: সাশ্রয়ী স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হ্যারিস স্বাস্থ্যখাতে সংস্কারের কথা বলছেন, যা সাধারণ মানুষকে আকর্ষণ করছে।ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং কমলা হ্যারিসের মধ্যে ২০২৪ সালের নির্বাচন এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। উভয়ের প্রচারণা কৌশল এবং ভোটারদের প্রত্যাশা নিয়ে এবারের নির্বাচন যে তীব্র প্রতিযোগিতার সৃষ্টি করবে তা নিশ্চিত। নির্বাচনের ফলাফল যাই হোক না কেন, আমেরিকার ভবিষ্যত নেতৃত্ব একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি ও দিকনির্দেশনা পেতে চলেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button