গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর: রক্তক্ষয়ের অবসানের আশায় গাজাবাসী

গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর: রক্তক্ষয়ের অবসানের আশায় গাজাবাসী
আজ রবিবার (১৯ জানুয়ারি) গাজা উপত্যকায় ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের মধ্যে বহুল প্রতীক্ষিত যুদ্ধবিরতি কার্যকর হতে যাচ্ছে। দীর্ঘ ১৫ মাস ধরে চলমান সংঘাতের পর এই যুদ্ধবিরতি গাজাবাসীর জন্য শান্তির এক নতুন দ্বার উন্মোচন করতে পারে।
এই চুক্তি কার্যকরে মধ্যস্থতা করেছে কাতার, যুক্তরাষ্ট্র এবং মিসর। কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারী গতকাল এক বিবৃতিতে জানান, যুদ্ধবিরতি গাজার স্থানীয় সময় সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে শুরু হবে। তিনি গাজাবাসীকে সতর্ক ও সাবধান থাকার পরামর্শ দিয়েছেন এবং সরকারি নির্দেশনা মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন।
যুদ্ধবিরতি চুক্তি ইসরায়েলের জোট সরকারের মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত হয়। দীর্ঘ ছয় ঘণ্টার বৈঠকের পর নেতানিয়াহুর দপ্তর থেকে জানানো হয়, চুক্তির আওতায় ইসরায়েলি জিম্মিদের ফিরিয়ে আনার ফ্রেমওয়ার্ক অনুমোদিত হয়েছে। তবে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে যুদ্ধবিরতির সুনির্দিষ্ট সময় উল্লেখ করা না হলেও বন্দি বিনিময়ের জন্য স্থানীয় সময় বেলা ২টার আগে কোনো বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হবে না বলে জানানো হয়েছে।
- হামাসের হামলা: ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আক্রমণে ১,২০০ জনের বেশি ইসরায়েলি নিহত হন এবং আড়াইশ জনের বেশি জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যাওয়া হয়।
- ইসরায়েলের প্রতিশোধমূলক হামলা:
- নিহত: গাজা কর্তৃপক্ষের মতে, ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত ৪৬,৮৯৯ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
- আহত: ১ লাখ ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ আহত।
- বাস্তুচ্যুত: লাখো ফিলিস্তিনি ঘরবাড়ি হারিয়েছেন।
এই যুদ্ধবিরতি তিনটি ধাপে কার্যকর করা হবে:
- প্রথম ধাপ (৬ সপ্তাহ):
- হামাস ৩৩ জন ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেবে।
- ইসরায়েল ১৯ বছরের কম বয়সী নারী ও শিশু বন্দিদের মুক্তি দেবে।
- গাজা থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর একটি অংশ সরিয়ে নেওয়া হবে।
- দ্বিতীয় ধাপ:
- বাকি জীবিত জিম্মিদের মুক্তি দেবে হামাস।
- বিনিময়ে ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি দেবে ইসরায়েল।
- গাজা থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর পুরোপুরি প্রত্যাহার।
- তৃতীয় ধাপ:
- মৃত জিম্মিদের মরদেহ ইসরায়েলকে ফেরত দেবে হামাস।
- গাজার পুনর্গঠন শুরু হবে।
গাজার দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী সংঘাতের পর এই যুদ্ধবিরতি গাজাবাসীর জন্য শান্তির বার্তা নিয়ে আসতে পারে। যদিও সামনের দিনগুলোতে এই চুক্তি কতটা কার্যকর হয় এবং উভয় পক্ষের মধ্যে আস্থার সম্পর্ক কতটা তৈরি হয়, তা সময়ই বলে দেবে।