সার আমদানি নিয়ে দ্বিধায় সরকার: আইটিএফসি ঋণ নাকি দেশীয় বিকল্প?

সার আমদানি নিয়ে দ্বিধায় সরকার: আইটিএফসি ঋণ নাকি দেশীয় বিকল্প?
দেশে সার সরবরাহ নিশ্চিত করতে সরকার দৃঢ় অবস্থানে থাকলেও, আমদানি অর্থায়নে দ্বিধায় পড়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো। ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ট্রেড ফাইন্যান্স করপোরেশন (আইটিএফসি) থেকে ৫০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা থাকলেও, উচ্চ সুদের হার এবং শর্ত কঠোর হওয়ায় এটি গ্রহণে অনীহা প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) ও বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি)।
ঋণ নিলে বাড়বে ব্যয়, না নিলে সংকটে সার সরবরাহ
সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী, কৃষি ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে বিসিআইসি ও বিএডিসি সার আমদানি করে থাকে। তবে, আইটিএফসির ঋণ গ্রহণ করলে সুদের হার হতে পারে ১৮.৫৩%, যা দেশীয় ব্যাংক ঋণের তুলনায় অনেক বেশি। অন্যদিকে, এই ঋণ না নিলে ডলার সংকট তৈরি হতে পারে এবং সরকারের ভর্তুকির পরিমাণ বাড়তে পারে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা গেছে, সার আমদানির জন্য অর্থের জোগান নিশ্চিত করতে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) আইটিএফসির সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। ২০২৪ সালের ১৪ ডিসেম্বর সৌদি আরবের জেদ্দায় অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে আইটিএফসি বাংলাদেশকে জ্বালানি ও সার খাতে মোট ২.৭৫ বিলিয়ন ডলার স্বল্পমেয়াদি ঋণ দেওয়ার বিষয়ে নীতিগত সম্মতি দেয়। এর মধ্যে ৫০০ মিলিয়ন ডলার সার আমদানির জন্য নির্ধারিত হয়।
বিএডিসি-বিসিআইসির আপত্তি
সরকারি সংস্থা বিএডিসি ও বিসিআইসি জানিয়েছে, আইটিএফসির ঋণের সুদ হার অনেক বেশি, যা তাদের জন্য আর্থিকভাবে চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। সংস্থাগুলোর মতে, বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঋণ সুদের হার ১২.৫০ থেকে ১৩.০০ শতাংশ, যা তুলনামূলকভাবে কম। ফলে আইটিএফসির ঋণ নিলে অতিরিক্ত খরচ হবে এবং ভর্তুকির পরিমাণ বেড়ে যাবে।
সরকারের সিদ্ধান্ত কী হতে পারে?
অর্থ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আইটিএফসি ঋণের ব্যবস্থাপনা ও দায় বিসিআইসি ও বিএডিসির ওপর বর্তাবে। তাই ঋণ নেওয়ার আগে তাদের পূর্ণ সম্মতি প্রয়োজন। অর্থ মন্ত্রণালয় বিসিআইসি ও বিএডিসির কাছে জানতে চেয়েছে, তারা যদি এই ঋণ না নেয়, তাহলে কীভাবে তারা বিদেশি মুদ্রার ব্যবস্থা করবে এবং সার আমদানি অব্যাহত রাখবে।
সার সংকট এড়াতে করণীয় কী?
দেশে বার্ষিক সারের চাহিদা প্রায় ৬০ লাখ মেট্রিক টন। স্থানীয় উৎপাদন কম হওয়ায় সরকার আমদানির ওপর নির্ভরশীল। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সময়মতো সার সরবরাহ নিশ্চিত করতে হলে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
সরকার যদি আইটিএফসির ঋণ নেয়, তাহলে উচ্চ সুদের বোঝা বইতে হবে। অন্যদিকে, দেশীয় উৎস থেকে অর্থায়নের মাধ্যমে আমদানি করলে ডলার সংকট তৈরি হতে পারে। এ অবস্থায় সরকারের সামনে দুটি পথ খোলা— হয় উচ্চ সুদ মেনে নিয়ে বিদেশি ঋণ নেওয়া, নয়তো দেশীয় বিকল্প অর্থায়নের পথ খোঁজা। এখন দেখার বিষয়, সরকার কোন পথে অগ্রসর হয়।