গাজীপুরে সরকারি খাসজমি পানির দরে বরাদ্দ, দখল নিয়ে বিতর্কে আওয়ামী লীগ নেতা

গাজীপুরে সরকারি খাসজমি পানির দরে বরাদ্দ, দখল নিয়ে বিতর্কে আওয়ামী লীগ নেতা
গাজীপুর মহানগরীর কাশিমপুর শিল্প এলাকায় মাত্র এক কোটি ৮০ লাখ টাকায় ৯ বিঘা সরকারি খাসজমি বরাদ্দ পেয়েছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ। স্থানীয়দের দাবি, জমিটির তৎকালীন বাজারমূল্য ছিল প্রায় ২২ কোটি ৫০ লাখ টাকা। অভিযোগ উঠেছে, সরকারি নিয়ম না মেনেই এই বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে এবং জমিতে বসবাসরত শতাধিক পরিবারকে উচ্ছেদ করা হয়েছে।
প্রভাব খাটিয়ে জমি দখল
স্থানীয়দের তথ্য মতে, নবীনগর-চন্দ্রা সড়কের পাশে বাড়ৈবাড়ি মৌজার এই জমি ২০১১ সালে দখলে নেন হানিফ। ‘প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী’ পদে থাকাকালীন তিনি প্রশাসনের সহায়তায় শতাধিক ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে দিয়ে জমির নিয়ন্ত্রণ নেন।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্র জানায়, মাহবুবউল আলম হানিফ ২০১০ সালে শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপনের নামে তিন একর (৯ বিঘা) খাসজমি বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করেন। মাত্র এক কোটি ৮০ লাখ টাকায় ২০১১ সালের ২৪ মার্চ জেলা প্রশাসক তাঁর নামে দলিল রেজিস্ট্রি করেন। অথচ সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, অকৃষি জমির দাম বাজারমূল্যের দেড় গুণ হওয়া উচিত।
জমির মূল্য নির্ধারণে অনিয়ম
কাশিমপুর ভূমি অফিসের এক কর্মকর্তার ভাষ্যমতে, ২০১১ সালে ওই এলাকার প্রতি শতাংশ জমির বাজারমূল্য ছিল পাঁচ লাখ টাকা। সে হিসেবে ৩০০ শতকের দাম হওয়া উচিত ছিল ১৫ কোটি টাকা, আর সরকারি নিয়ম অনুযায়ী বরাদ্দমূল্য দাঁড়াত ২২ কোটি ৫০ লাখ টাকা। কিন্তু হানিফকে মাত্র এক কোটি ৮০ লাখ টাকায় বরাদ্দ দেওয়া হয়, যা বড় ধরনের দুর্নীতির ইঙ্গিত দেয়।
শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপনের শর্ত ভঙ্গ
সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, বরাদ্দের তিন বছরের মধ্যে শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপন না করলে জমির মালিকানা বাতিল হওয়ার কথা। কিন্তু ১৪ বছর পেরিয়ে গেলেও হানিফ জমিতে কোনো স্থাপনা নির্মাণ করেননি। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, পুরো জমি উঁচু সীমানাপ্রাচীর দিয়ে ঘেরা, গেটে তালা ঝুলছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ ও ক্ষোভ
বরইবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা খোরশেদ আলী মুন্সী (৬৫) জানান, তাঁর বসতবাড়িসহ শতাধিক ঘরবাড়ি বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। ক্ষতিপূরণ তো দূরের কথা, উচ্ছেদে ব্যবহৃত বুলডোজারের খরচ পর্যন্ত স্থানীয় ভূমি অফিসকে বহন করতে হয়েছে।
এ বিষয়ে হানিফের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, বরাদ্দের চেয়ে অনেক বেশি জমি দখল করেছেন তিনি, যা এখনো মুক্ত হয়নি।
এই জমি বরাদ্দ নিয়ে প্রশাসনের ভেতরেও সমালোচনা চলছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে জানা গেছে।