জীবন যাত্রা

আর নই প্রোকাস্টিনেশন

প্রোকাস্টিনেশন

প্রোকাস্টিনেশন বা কাজ ফেলে রাখার প্রবণতা একটি মানসিক অভ্যাস, যা আমাদের জীবনে অত্যন্ত নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এটি একটি এমন প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে আমরা কোনো কাজ শেষ মুহূর্তে ফেলে রাখি কিংবা ইচ্ছাকৃতভাবে দেরি করি। এতে করে কাজটি সম্পন্ন করতে আমাদের বেশি সময় ও চাপের মধ্যে পড়তে হয়, যা মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের ওপর খারাপ প্রভাব ফেলে।

প্রোকাস্টিনেশনের একটি সাধারণ কারণ হলো ভয়ের অনুভূতি, বিশেষ করে ব্যর্থতার ভয়। অনেক সময় কাজটি খুব বড় বা কঠিন মনে হলে আমরা ভয় পেয়ে যাই এবং কাজটি এড়াতে চেষ্টা করি। অন্যদিকে, নিখুঁত হওয়ার প্রবণতাও প্রোকাস্টিনেশন বাড়াতে পারে। অনেকেই কাজটি সর্বোচ্চ মানে সম্পন্ন করতে চায়, এবং এই চিন্তায় কাজটি শুরু করতে দেরি করে, কারণ তারা মনে করে প্রস্তুতি এখনো পূর্ণতা পায়নি। এর ফলে কাজ ফেলে রাখা হয়, এবং শেষমেশ কোনোভাবে কাজটি করতে বাধ্য হয়।

কাজ ফেলে রাখার প্রবণতা আমাদের জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে। শিক্ষার্থীরা হোমওয়ার্ক বা অ্যাসাইনমেন্টের কাজ প্রায়ই শেষ মুহূর্তে রেখে দেয়, যা শেষ পর্যন্ত চাপ বাড়ায় এবং পারফরম্যান্স কমিয়ে দেয়। অফিসে কর্মচারীরা তাদের নির্ধারিত কাজ সময়মতো শুরু না করে শেষ মুহূর্তে সম্পন্ন করতে বাধ্য হয়, যা কাজের মান কমিয়ে দেয় এবং মানসিক চাপ বাড়ায়। দীর্ঘমেয়াদে এটি আত্মবিশ্বাসের অভাব, হতাশা এবং এমনকি উদ্বেগের কারণ হতে পারে।

প্রোকাস্টিনেশন থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য প্রাথমিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ হলো স্ব-অনুপ্রেরণা এবং কাজের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব গড়ে তোলা। কাজটিকে ভয় না পেয়ে, ছোট ছোট অংশে ভাগ করে প্রতিদিন কিছুটা করে এগিয়ে যাওয়া উচিত। এই প্রক্রিয়ায় কাজটি সহজ মনে হয় এবং শেষ পর্যন্ত সম্পন্ন করা যায়। এর জন্য “Pomodoro Technique” বা “Break & Work” পদ্ধতি খুবই কার্যকর হতে পারে, যেখানে নির্দিষ্ট সময়ে কাজ এবং বিরতির মাধ্যমে কাজটি এগিয়ে নেয়া হয়।

কাজ ফেলে রাখার প্রবণতা দূর করার জন্য আরেকটি উপায় হলো সুনির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করা। কাজটি কখন শুরু করা হবে এবং কতটুকু সময়ে শেষ করা হবে, এটি নির্ধারণ করে কাজ করতে গেলে প্রোকাস্টিনেশনের প্রবণতা কমে আসে। এছাড়া, নিজের লক্ষ্যের কথা মনে রেখে কাজে মনোযোগ বাড়ানোর চেষ্টা করতে হবে। কারণ, যদি আমরা লক্ষ্যে পৌছাতে প্রয়োজনীয় প্রচেষ্টা করতে পারি, তাহলে প্রোকাস্টিনেশন আমাদের কাছে বাধা হয়ে দাঁড়াবে না।

সবশেষে, মনে রাখা উচিত যে, প্রোকাস্টিনেশন শুধু সময়ের অপচয়ই নয়, বরং এটি আমাদের ব্যক্তিগত উন্নয়নকেও বাধাগ্রস্ত করে। কাজের প্রতি নিয়মিত ও সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি অর্জন করলে প্রোকাস্টিনেশন থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। কাজ ফেলে রাখার এই প্রবণতা থেকে নিজেকে মুক্ত করার মাধ্যমে আমরা নিজের মধ্যে একটি পরিবর্তন আনতে পারি এবং সফলতার পথে এগিয়ে যেতে পারি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button