মিয়ানমারের সংকট নিরসনে প্রতিবেশী দেশগুলোর বৈঠক
মিয়ানমারের চলমান সংকট নিয়ে দেশটির প্রতিবেশী ছয় দেশ থাইল্যান্ডে একত্রিত হয়ে বৈঠকে বসতে যাচ্ছে। বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার ব্যাংককে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
মিয়ানমারের চলমান সংকট নিয়ে দেশটির প্রতিবেশী ছয় দেশ থাইল্যান্ডে একত্রিত হয়ে বৈঠকে বসতে যাচ্ছে। বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার ব্যাংককে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এতে অংশ নেবে বাংলাদেশ, ভারত, চীন, লাওস, মিয়ানমার এবং থাইল্যান্ড। বৈঠকটি মূলত মিয়ানমারের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, সীমান্ত পরিস্থিতি, এবং রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক ইস্যুতে আলোচনার উদ্দেশ্যে আয়োজন করা হয়েছে।
প্রথম দিন, ছয় দেশের মধ্যে একটি অনানুষ্ঠানিক বৈঠক হবে। এটি সীমান্ত অপরাধ, নিরাপত্তা পরিস্থিতি এবং মিয়ানমারের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা করবে। বৈঠকের দ্বিতীয় দিনে আসিয়ান পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের একটি আনুষ্ঠানিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে ইন্দোনেশিয়া এবং মালয়েশিয়া যুক্ত হবে। তবে, মিয়ানমারের জান্তা সরকারের প্রতিনিধি এতে অংশগ্রহণ করবে কি না, তা নিশ্চিত নয়।
মিয়ানমারে চীন এবং ভারতের বিশাল অর্থনৈতিক এবং কৌশলগত স্বার্থ রয়েছে। রাখাইন প্রদেশে ভারতের অর্থায়নে কালাদান মাল্টিমোডাল প্রকল্পের কাজ চলছে। এই প্রকল্পটি কলকাতা থেকে মিয়ানমারের সিতওয়ে বন্দর পর্যন্ত সমুদ্রপথ এবং সেখান থেকে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল পর্যন্ত সরাসরি সংযোগ স্থাপন করবে। কিন্তু এই অঞ্চলে চীনের সমর্থনপুষ্ট আরাকান আর্মির উপস্থিতি ভারতের স্বার্থের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ভারতের উচিত আরাকান আর্মির সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করা, যাতে চীনের প্রভাব মোকাবিলা করা যায়।
অন্যদিকে, চীন রাখাইন রাজ্যে বড় প্রকল্পে বিনিয়োগ করেছে। চীন সেখান থেকে গ্যাস এবং তেল আমদানির জন্য পাইপলাইন নির্মাণ করেছে, যা চীনের কুনমিং অঞ্চলের সঙ্গে যুক্ত। এছাড়াও, চীন রাখাইনে বিদ্যুৎ এবং সমুদ্রবন্দর নির্মাণের মতো বড় অর্থনৈতিক প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।
মিয়ানমারের সংকট বাংলাদেশের জন্য সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে, রোহিঙ্গা শরণার্থী ইস্যু এবং সীমান্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশ এই বৈঠকে সক্রিয় ভূমিকা রাখবে।
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তিনটি প্রধান ইস্যু নিয়ে আলোচনা হবে:
- রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন: মিয়ানমারের পরিস্থিতি স্থিতিশীল হলে রোহিঙ্গাদের নিরাপদে ফেরত পাঠানো সম্ভব হবে।
- সীমান্ত অপরাধ দমন: সীমান্তে মাদক এবং চোরাচালান রোধে বাংলাদেশ যৌথ পদক্ষেপ গ্রহণে আগ্রহী।
- আসিয়ানের সঙ্গে সংযোগ: আসিয়ানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরির মাধ্যমে বাংলাদেশ আঞ্চলিক সহযোগিতায় নতুন সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিরাপত্তা বিশ্লেষক এমদাদুল ইসলাম বলেছেন, আরাকান আর্মি রাখাইন অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ায় মিয়ানমারের সঙ্গে প্রত্যাবাসন আলোচনা জটিল হয়ে পড়েছে।
অন্যদিকে, আসিয়ানের মাধ্যমে রোহিঙ্গা ইস্যুতে সমাধানের চেষ্টা করার পাশাপাশি আঞ্চলিক সমর্থন অর্জন করতে পারলে এটি বাংলাদেশের জন্য কৌশলগতভাবে লাভজনক হতে পারে।
মিয়ানমারের সংকট নিরসনে প্রতিবেশী দেশগুলোর এই বৈঠক একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। বাংলাদেশ এই আলোচনায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে রোহিঙ্গা ইস্যুতে সমাধানের পথে এগোতে পারে। একই সঙ্গে, সীমান্ত নিরাপত্তা ও আঞ্চলিক সহযোগিতায় ভূমিকা রাখতে পারলে এটি বাংলাদেশের জন্য একটি বড় অর্জন হবে।