নির্বাচন ২০২৫ সালের শেষ দিক থেকে ২০২৬ সালের প্রথমার্ধের মধ্যে অনুষ্ঠিত হতে পারে
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে গতকাল জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন। ভাষণে তিনি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়সূচি সম্পর্কে ধারণা দেন। তিনি বলেন, নির্বাচন ২০২৫ সালের শেষ দিক থেকে ২০২৬ সালের প্রথমার্ধের মধ্যে অনুষ্ঠিত হতে পারে। রাজনৈতিক দলগুলোর দাবি এবং নির্বাচন প্রক্রিয়ার বিভিন্ন পর্যায় বিবেচনা করে তিনি এই সময়সূচি তুলে ধরেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, প্রথমে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা একটি বড় কাজ। গত কয়েকটি নির্বাচনে ভোটারদের অংশগ্রহণের সুযোগ না থাকায় এবার সঠিক ও নির্ভুল ভোটার তালিকা প্রস্তুত করা জরুরি। তিনি তরুণ ভোটারদের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করে বলেন, এবারের নির্বাচনে প্রথমবারের মতো ভোট দিতে যাওয়া তরুণরা শতভাগ উপস্থিতি নিশ্চিত করে একটি ঐতিহ্য তৈরি করতে পারে। এ ছাড়া তিনি প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার ওপরও জোর দেন।
তিনি জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করেছে। এসব কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে একটি জাতীয় ঐকমত্য গঠন কমিশন গঠন করা হবে, যার নেতৃত্বে থাকবেন তিনি নিজেই। এই কমিশন রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় সংস্কার চিহ্নিত করবে এবং তা বাস্তবায়নের সুপারিশ করবে।
গুম কমিশনের প্রতিবেদন প্রসঙ্গে ড. ইউনূস বলেন, এটি একটি লোমহর্ষক দলিল, যা অতীত সরকারের সময়ের নিপীড়ন ও নৃশংসতার চিত্র তুলে ধরেছে। অনেকেই এখনো ভয়ে মুখ খুলতে পারছেন না, কিন্তু এই প্রতিবেদন ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ নথি হয়ে থাকবে।
অর্থনীতি পুনরুদ্ধার প্রসঙ্গে তিনি জানান, রপ্তানি আয় বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে ১৯ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। তিনি গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতন ৯ শতাংশ বৃদ্ধির সিদ্ধান্তের কথা উল্লেখ করেন এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের পদক্ষেপ তুলে ধরেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান বলেন, বিচার প্রক্রিয়া স্বচ্ছ করার জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধন করা হয়েছে। মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্তদের বিচার দ্রুত এগিয়ে চলছে।
প্রধান উপদেষ্টা বিজয়ের মাসে জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানিয়ে বলেন, বিভেদ ও সাম্প্রদায়িক রাজনীতির অপচেষ্টা ব্যর্থ করতে হবে। তিনি বলেন, পরাজিত স্বৈরশাসক এবং তাদের দোসররা দেশকে বিভক্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু ঐক্যবদ্ধ থাকলে কোনো শক্তিই বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা থামাতে পারবে না।
জাতির উদ্দেশে ভাষণের শেষে তিনি বলেন, বিজয়ের মাস হোক অসম্ভবকে সম্ভব করার প্রতিজ্ঞার মাস। তিনি সবাইকে আহ্বান জানান, অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সত্যকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে দেশের প্রকৃত চিত্র বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে।