আন্তজার্তিক অঙ্গন

ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চান পুতিন, তবে শর্তসাপেক্ষ

ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চান পুতিন, তবে শর্তসাপেক্ষ

ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনা করতে চান রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তবে এ আলোচনা শর্তসাপেক্ষে হবে। ক্রেমলিন ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলোর দাবি, পুতিন ইউক্রেনে রাশিয়ার দখল করা ভূখণ্ডে কোনো বড় ছাড় দিতে চান না। পাশাপাশি, ইউক্রেনকে ন্যাটোতে যোগদানের পরিকল্পনা ত্যাগ করতে হবে।

ট্রাম্প আগেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তিনি ক্ষমতায় গেলে ইউক্রেন যুদ্ধ দ্রুত বন্ধ করবেন। গত ৫ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হন তিনি। এমন সময়ে তিনি হোয়াইট হাউসে যাচ্ছেন, যখন রাশিয়া যুদ্ধক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। বর্তমানে রাশিয়ার দখলে থাকা ইউক্রেনের ভূখণ্ডের পরিমাণ যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যের আকারের সমান।

সূত্রগুলো জানায়, ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি হলে রাশিয়া ইউক্রেনের দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, জাপোরিঝঝিয়া ও খেরসন অঞ্চলের ভাগাভাগি নিয়ে আলোচনায় রাজি হতে পারে। এ অঞ্চলগুলোর ৭০-৮০ শতাংশ ইতিমধ্যে রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে। তবে উত্তর ও দক্ষিণ ইউক্রেনের খারকিভ ও মিকোলাইভের মতো সীমিত অংশ থেকে সেনা প্রত্যাহার করতে পারে রাশিয়া।

তবে ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে যে, যুদ্ধবিরতির শর্ত হবে যুদ্ধক্ষেত্রে বর্তমান বাস্তবতার নিরিখে। পুতিন আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, স্বল্পমেয়াদি যুদ্ধবিরতি ইউক্রেনকে সামরিক শক্তি বাড়ানোর সুযোগ করে দিতে পারে, যা পশ্চিমাদের সহযোগিতায় সম্ভব হবে।

সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইউক্রেনকে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছেন, যা রাশিয়ার ভেতরে হামলা চালাতে ব্যবহৃত হয়েছে। এই পদক্ষেপ রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্র উত্তেজনা বাড়িয়েছে। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ যুদ্ধ পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি ঘটিয়েছে।”

ট্রাম্পের যোগাযোগবিষয়ক পরিচালক স্টিভেন চেউং মন্তব্য করেন, “পৃথিবীতে একমাত্র ট্রাম্পই রাশিয়া ও ইউক্রেনকে এক ছাতার নিচে আনতে সক্ষম।” ট্রাম্প নিজেও বলেছেন, শান্তি চুক্তির জন্য প্রয়োজনে তিনি সরাসরি পুতিনের সঙ্গে কথা বলবেন। তবে মস্কো ও কিয়েভকে কীভাবে একত্রে আলোচনায় বসাবেন, তা নিয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেননি।

রাশিয়া চায় ইউক্রেন ন্যাটোতে যোগদানের পরিকল্পনা বাতিল করুক। একই সঙ্গে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর আকার ছোট করতে হবে এবং রুশভাষীদের ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞা না দিতে হবে। রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকা বিশেষজ্ঞ দিমিত্রি সিমেসের মতে, দ্রুত একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি সম্ভব হলেও দীর্ঘমেয়াদি সমাধানে দুই দেশের জন্য চ্যালেঞ্জ রয়ে যাবে।

বর্তমানে ইউক্রেনের ১৮ শতাংশ ভূখণ্ড রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এর মধ্যে দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, জাপোরিঝঝিয়া, খেরসন এবং ২০১৪ সালে দখল করা ক্রিমিয়া অন্তর্ভুক্ত। অন্যদিকে ইউক্রেন কেবল রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলের সীমিত এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে।

ক্রেমলিন ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র বলেছে, “পশ্চিমাদের নির্মম বাস্তবতা মেনে নিতে হবে যে পূর্ব ইউক্রেনের রুশ-নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলগুলো মস্কোর অধীনে থাকবে।”

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যুদ্ধবিরতি বা চুক্তি হলেও এটি দীর্ঘমেয়াদি শান্তি প্রতিষ্ঠায় যথেষ্ট হবে না। তবে পুতিন ও ট্রাম্পের সম্ভাব্য আলোচনা নতুন কূটনৈতিক অধ্যায়ের সূচনা করতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button