নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশ: কী কী পরিবর্তন আসতে পারে?
নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশ: কী কী পরিবর্তন আসতে পারে?
১. নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা পুনর্বহাল
সংস্কার কমিশন নির্বাচন কমিশনকে গুরুতর নির্বাচনী অনিয়মের ক্ষেত্রে পুরো নির্বাচন বাতিলের ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়ার সুপারিশ করেছে। অতীতে ‘পোলিং’-এর পরিবর্তে ‘ইলেকশন’ শব্দটি ফিরিয়ে আনার প্রস্তাব করা হয়েছে।
২. সশস্ত্র বাহিনীর ক্ষমতা পুনরুদ্ধার
নির্বাচনে সশস্ত্র বাহিনীকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সংজ্ঞায় অন্তর্ভুক্ত করে, তাদের বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তারের ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
৩. নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন বৃদ্ধি
নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসনের সংখ্যা ১০০-তে উন্নীত এবং সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে সংসদীয় আসনের সংখ্যা ৩০০ থেকে ৪০০-তে উন্নীত করার প্রস্তাবও রয়েছে।
৪. দলীয় প্রার্থী হওয়ার শর্ত কঠোরকরণ
দলীয় প্রার্থী হতে হলে আগের নিবন্ধিত দলে তিন বছর সদস্য পদ থাকা বাধ্যতামূলক করা হবে। নতুন নিবন্ধিত দলের ক্ষেত্রে এই বিধান প্রযোজ্য হবে না।
৫. নির্বাচন কমিশনারদের দায়বদ্ধতা
নির্বাচন কমিশনারদের গুরুতর নির্বাচনী অপরাধে শাস্তির আওতায় আনার সুপারিশ করা হয়েছে, যা তাদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করবে।
৬. পোস্টাল ব্যালট সহজীকরণ
নির্বাচনী কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তা, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রবাসী ভোটার এবং শারীরিক প্রতিবন্ধীদের জন্য পোস্টাল ব্যালটের ব্যবস্থা সহজ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
৭. নির্বাচনী ব্যয় ও সম্পত্তি হিসাব স্বচ্ছকরণ
প্রার্থীদের হলফনামায় দেশি-বিদেশি স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির হিসাব দেওয়া বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব করা হয়েছে। নির্বাচনী ব্যয় পর্যবেক্ষণের জন্য আলাদা কমিটি গঠনের প্রস্তাবও রয়েছে।
৮. ইভিএম ব্যবহার ও ‘না’ ভোট চালু
ইভিএম ব্যবহারের ক্ষেত্রে সব রাজনৈতিক দলের ঐকমত্য নিশ্চিত করা এবং পুনরায় ‘না’ ভোটের বিধান চালু করার সুপারিশ করা হয়েছে।
৯. ঋণ ও বিল খেলাপিদের ক্ষেত্রে কঠোর বিধান
খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল এবং বিল পরিশোধের সময়সীমা মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার এক সপ্তাহ আগে নির্ধারণ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
১০. নির্বাচনী সীমানা নির্ধারণে নতুন পরিকল্পনা
মহানগর এলাকায় আসন সংখ্যা না বাড়িয়ে বিদ্যমান সীমানায় পরিবর্তনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
১১. সংবিধান সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা
সংসদীয় আসন বাড়ানো এবং দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ গঠনসহ কয়েকটি সাংবিধানিক বিষয়ে সংশোধনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
১২. নির্বাচনী আইন সংশোধন
২০০১ এবং ২০০৮ সালে যোগ করা বেশ কিছু বিধান, যা পরে বাতিল করা হয়েছিল, সেগুলো পুনঃপ্রবর্তনের সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে দলীয় প্রার্থী হতে তৃণমূলের ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হওয়ার বাধ্যবাধকতা উল্লেখযোগ্য।
এই সুপারিশগুলো কার্যকর হলে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নির্বাচনব্যবস্থায় বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে। নারীর প্রতিনিধিত্ব বৃদ্ধি, সশস্ত্র বাহিনীর ক্ষমতা পুনর্বহাল এবং নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা বাড়ানোর মাধ্যমে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া আরও শক্তিশালী হতে পারে।