কবি হেলাল হাফিজের জীবন যেমন রহস্যময়, মৃত্যুর পরেও তিনি রয়ে যাবেন তার কবিতার শব্দে, অনুভবে এবং প্রেরণায়
কবি হেলাল হাফিজের জীবন ও সাহিত্যচর্চা যেন এক তীব্র যন্ত্রণার শিল্পযাত্রা। একদিকে নিঃসঙ্গতা, অন্যদিকে দ্রোহ ও প্রেমের মিশেলে তার কবিতাগুলো পাঠকদের মননে অমোঘ ছাপ ফেলে গেছে। তিনি কখনো গৃহস্থের জীবন বেছে নেননি। বরং স্বেচ্ছায় সন্ন্যাস বেছে নিয়ে নিজের শিল্পকে উচ্চতর স্থানে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করেছেন। তার কাব্যিক যাত্রা ছিল স্বতন্ত্র এবং গভীর অর্থবহ।
‘এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়’—এই পঙক্তির মাধ্যমে তিনি শুধু এক ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষীই হননি, বরং তা একটি প্রজন্মের জাগরণের প্রতীক হয়ে উঠেছে। উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানের উত্তাল সময় থেকে মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গন পর্যন্ত তার কবিতার শব্দগুলো প্রেরণার মশাল জ্বালিয়েছে। এমনকি বর্তমান সময়েও, এই পঙক্তি অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে রয়েছে।
তার সাহিত্যকর্ম যেমন সময়ের সীমানা পেরিয়ে যুগান্তকারী হয়ে উঠেছে, তেমনি তার ব্যক্তিগত জীবনও পাঠকের জন্য এক মহাবিস্ময়ের কেন্দ্রবিন্দু। মা-বিহীন শৈশব, নির্লিপ্ত ও নির্মোহ জীবনের পথচলা, এবং অসুস্থতা সবই তাকে ব্যথাতুর করেছে, তবে শিল্পের প্রতি ভালোবাসা তাকে এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে।
তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘যে জলে আগুন জ্বলে’ আজও বাংলা সাহিত্যের অন্যতম রত্ন। দ্রোহ, প্রেম, বেদনা—তিনটি অনুভবের মেলবন্ধন এ বইকে কালজয়ী করে তুলেছে। এ ছাড়া ‘একজীবনের জন্মজখম’ ও ‘বেদনাকে বলেছি কেঁদো না’ তার অন্যান্য আলোচিত গ্রন্থ। তার সাহিত্যকর্মের মূল উপজীব্য ছিল মানুষের অনুভূতি, সংগ্রাম এবং প্রেম।
কবি হেলাল হাফিজের জীবন যেমন রহস্যময়, তেমনি তার সাহিত্যও পাঠকের কাছে এক মুগ্ধতার বিষয়। মৃত্যুর পরেও তিনি রয়ে যাবেন তার কবিতার শব্দে, অনুভবে এবং প্রেরণায়।