পাঠ্যবইয়ে পরিবর্তনের হাওয়া উঠে আসছে গণ-অভ্যুত্থানের ইতিহাস
পাঠ্যবইয়ে পরিবর্তনের হাওয়া: উঠে আসছে গণ-অভ্যুত্থানের ইতিহাস
পাঠ্যবইয়ে পরিবর্তনের হাওয়া: উঠে আসছে গণ-অভ্যুত্থানের ইতিহাস
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের টানা সাড়ে ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটার পর দেশের সবক্ষেত্রেই পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে। এর ধারাবাহিকতায় পাঠ্যবইয়ে সঠিক ইতিহাস তুলে ধরার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে প্রথম থেকে দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে যুক্ত হচ্ছে একগুচ্ছ পরিবর্তন।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) জানিয়েছে, নতুন পাঠ্যবইয়ে ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানের গল্প, স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে জিয়াউর রহমানের অবদান, এবং মওলানা ভাসানী ও জাতীয় চার নেতার ভূমিকা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে অতিরঞ্জিত ইতিহাস এবং তার পরিবার-সংক্রান্ত কিছু বিষয় পাঠ্যবই থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণির বইয়ে যুক্ত হয়েছে নতুন একটি অধ্যায়, যেখানে ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থান এবং শহীদদের গল্প তুলে ধরা হয়েছে। এতে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদ এবং ঢাকার বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের শিক্ষার্থী মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধসহ অসংখ্য মানুষের অবদান তুলে ধরা হয়েছে। বিশেষ করে মুগ্ধের বলা “পানি লাগবে, পানি” উক্তিটি আন্দোলনের প্রধান স্লোগানে পরিণত হয়।
নতুন পাঠ্যবইয়ে ২৬ মার্চের স্বাধীনতার ঘোষণা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে প্রথমবার স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। এরপর ২৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে পুনরায় স্বাধীনতার ঘোষণা দেন।
বই থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে অতিরঞ্জিত তথ্য এবং ‘জাতির পিতা’ ও ‘হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি’ উপাধি। তবে বঙ্গবন্ধু উপাধির স্বীকৃতি অব্যাহত রাখা হয়েছে। বাদ পড়েছে চতুর্থ শ্রেণির বাংলা বইয়ের “খোকাবাবু” কবিতাসহ বঙ্গবন্ধু পরিবারের অন্যান্য তথ্যও।
পাঠ্যবইয়ের পেছনের প্রচ্ছদে শেখ হাসিনার ছবি ও উদ্ধৃতির পরিবর্তে শিক্ষার্থীদের আঁকা গ্রাফিতি যুক্ত করা হয়েছে। এসব গ্রাফিতিতে উঠে এসেছে গণ-অভ্যুত্থান, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ এবং মানবিক মূল্যবোধের প্রতিচ্ছবি।
উদাহরণস্বরূপ, প্রথম শ্রেণির বাংলা বইয়ে একটি গ্রাফিতিতে লেখা হয়েছে “মানুষ হইতে হবে মানুষ যখন”, আর ইংরেজি বইয়ে “ইউনিটি ইজ স্ট্রেনথ”।
দেশের মূল্যবোধের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বিষয়গুলো বাদ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মাদরাসার বইয়ের অনেক ছবিতেও পরিবর্তন আনা হয়েছে।
এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান জানান, “মুক্তিযুদ্ধ বা ইতিহাসে যার যা ভূমিকা, তা বইয়ে যুক্ত হয়েছে। গণ-অভ্যুত্থানের গল্পও যুক্ত হয়েছে, যা শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করবে।”
২০২৫ সালের পাঠ্যবইয়ে প্রাথমিক পরিবর্তনের পর, ২০২৬ সালে আরও উন্নত সংস্করণ আনার পরিকল্পনা রয়েছে এনসিটিবির।