প্রবীণ অভিনেতা প্রবীর মিত্র আর নেই
প্রবীণ অভিনেতা প্রবীর মিত্র আর নেই
বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি অভিনেতা প্রবীর মিত্র আজ রবিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। তাঁর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন অভিনেতা মিশা সওদাগর। নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পোস্টে তিনি এই দুঃসংবাদ জানান।
দীর্ঘদিনের অসুস্থতা
প্রবীর মিত্র দীর্ঘদিন ধরে অক্সিজেন স্বল্পতাসহ নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন। গত ২২ ডিসেম্বর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় আইসিইউতে রাখা হয়েছিল।
জীবনের শুরু থেকে চলচ্চিত্রে অবদান
প্রবীর মিত্র ১৯৪৩ সালের ১৮ আগস্ট কুমিল্লার চান্দিনায় জন্মগ্রহণ করেন এবং পুরান ঢাকায় বড় হন। স্কুলজীবন থেকেই তিনি নাট্যচর্চায় যুক্ত ছিলেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ডাকঘর’ নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে তাঁর অভিনয়ের যাত্রা শুরু।
১৯৬৯ সালে নির্মিত ‘জলছবি’ সিনেমার মাধ্যমে তাঁর চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে। তবে ছবিটি মুক্তি পায় ১৯৭১ সালের ১ জানুয়ারি। প্রায় চার শতাধিক সিনেমায় অভিনয় করা প্রবীর মিত্র তাঁর অভিনয়শৈলীর জন্য সর্বদাই প্রশংসিত হয়েছেন।
উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র
প্রবীর মিত্র অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে:
- ফরিয়াদ
- রক্ত শপথ
- চরিত্রহীন
- তিতাস একটি নদীর নাম
- বড় ভালো লোক ছিল
- অঙ্গার
- ফকির মজনু শাহ
- পুত্রবধূ
- অনুরাগ
- জয় পরাজয়
তাঁর অসামান্য নান্দনিক অভিনয় বাংলা চলচ্চিত্রপ্রেমীদের মনে চিরস্থায়ী জায়গা করে নিয়েছে।
পুরস্কার ও সম্মাননা
প্রবীর মিত্র তাঁর দীর্ঘ ক্যারিয়ারে মাত্র একবার শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন, সেটি ছিল ‘বড় ভালো লোক ছিল’ সিনেমার জন্য। পরে ২০১৮ সালে তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে আজীবন সম্মাননায় ভূষিত হন।
শেষ দিনগুলো
শারীরিক অসুস্থতার কারণে গত কয়েক বছর ধরে তিনি অভিনয়ে অনিয়মিত ছিলেন। দিন-রাত ঘরবন্দি অবস্থায় কাটছিল প্রবীণ এই অভিনেতার সময়। তাঁর মৃত্যুতে বাংলা চলচ্চিত্র জগতে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
শেষকৃত্যের প্রস্তুতি
পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তাঁর শেষকৃত্য নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। আগামীকাল সকালে তাঁর শেষ বিদায়ের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হবে।
বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পে প্রবীর মিত্রের অবদান চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তাঁর আত্মার চিরশান্তি কামনা করছে পুরো জাতি।