ধানমণ্ডি ৩২-এ বঙ্গবন্ধুর বাড়ি ভাঙচুর, উচ্ছৃঙ্খল জনতার তাণ্ডব

ধানমণ্ডি ৩২-এ বঙ্গবন্ধুর বাড়ি ভাঙচুর, উচ্ছৃঙ্খল জনতার তাণ্ডব
ঢাকা, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫:
ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক বাড়ির সামনে ও ভেতরে হাজারো মানুষের ঢল নেমেছে। বুধবার রাতে একটি ক্রেন ও দুটি এক্সকাভেটরের সাহায্যে বাড়িটির অর্ধেক অংশ ভাঙা হয়। তবে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বৃহস্পতিবার সকালে এক্সকাভেটর সরিয়ে নেওয়া হয়।
ভাঙা বাড়ির আসবাব ও লোহা সংগ্রহের হিড়িক
প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, ভোরের আলো ফোটার পর থেকেই বাড়িটির সামনে মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে। অনেকে ভবনের ধ্বংসাবশেষ থেকে কাঠ, লোহা, আসবাব ও অন্যান্য সামগ্রী সংগ্রহ করতে শুরু করে। এদের কেউ কেউ দাবি করেন, তাঁরা শেখ হাসিনার সরকারের অন্যায়ের প্রতীক হিসেবে এসব নিয়ে যাচ্ছেন। কেউ কেউ আবার ‘প্রতিবাদের নিদর্শন’ হিসেবে ইট সংগ্রহ করেন।
একজন রিকশাচালক ইব্রাহিম জানান, আগের দিন ৩৫ কেজি লোহা বিক্রি করে ভালো দাম পেয়েছিলেন, তাই আবার এসেছেন। আরেক ব্যক্তি জানান, ‘সবাই নিচ্ছে, আমিও নিলাম। বিক্রি করে চাল-ডাল কিনব।’
ভবনের বিভিন্ন অংশে আগুন, ধ্বংসযজ্ঞ অব্যাহত
সকাল ১১টার দিকে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের বিভিন্ন অংশে আগুন জ্বলতে দেখা যায়। প্রচণ্ড ধোঁয়া ও তাপের মধ্যেই নিম্ন আয়ের শতাধিক মানুষ হাতুড়ি ও শাবল দিয়ে কাঠামো ভাঙতে থাকে। কেউ কেউ ভবন থেকে লোহা ও স্টিল কেটে রিকশায় করে সরিয়ে নিয়ে যায়।
ধ্বংসস্তূপের পাশের দেয়ালে কালো কালিতে লেখা হয় ‘ফেরাউনের মৃত্যুস্থান’ এবং ‘একেকটা ধ্বংসস্তূপ আমাদের বিজয়ের আগাম নিশান।’
জাদুঘরের বই ও স্মারক সংগ্রহের হিড়িক
পেছনের ছয়তলা ভবন, যা সম্প্রতি জাদুঘর হিসেবে ব্যবহৃত হতো, সেখানেও জনসাধারণের প্রবেশ দেখা যায়। বঙ্গবন্ধু সম্পর্কিত বিভিন্ন বই হাতে নিতে দেখা গেছে অনেককে।
সরকারবিরোধী স্লোগান ও গণপিটুনি
দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মাইকে সরকারবিরোধী স্লোগান দেওয়া শুরু হয়। বিভিন্ন দলে বিভক্ত জনতা ‘দালালি না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ’ এবং ‘দড়ি লাগলে দড়ি নে, খুনি হাসিনার ফাঁসি দে’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকে।
এ সময় এক নারী ও এক পুরুষকে আওয়ামী লীগের কর্মী সন্দেহে গণপিটুনির শিকার হতে হয়। ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেওয়ায় একজন নারী এবং ‘আপার বাড়ি’ শব্দ উচ্চারণ করায় একজন পুরুষকে মারধর করে ধানমণ্ডি ৩২ থেকে প্রধান সড়কে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। পরে ফটো সাংবাদিকদের সহায়তায় তাঁদের রিকশায় তুলে দেওয়া হয়।
সুধা সদনেও আগুন
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বামী এম এ ওয়াজেদ মিয়ার স্মরণে নামকরণ করা ‘সুধা সদন’-এর বিভিন্ন অংশেও আগুন জ্বলতে দেখা যায়। ধ্বংসস্তূপ থেকে লোহা, কাঠ, এসি, ফ্রিজের তারসহ বিভিন্ন সামগ্রী সংগ্রহ করতে দেখা গেছে অনেককে। এক নারী জানান, ‘সব পুড়েই গেছে, সকাল সকাল অনেকেই যা পারছে নিয়ে গেছে। আমিও কিছু টুকটাক নিয়েছি, বেঁচে যদি কিছু টাকা পাওয়া যায়।’
সামগ্রিক পরিস্থিতি
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুরো ধানমণ্ডি এলাকা এখন উত্তেজনাপূর্ণ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি দেখা গেলেও জনতার তাণ্ডব ঠেকানোর ক্ষেত্রে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই পরিস্থিতি আরও অবনতি হলে তা দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে।